All language subtitles for Sita-Ramam-WEB-DL-Amazon-Prime-2k-Bengali

ওয়াহিদা! থামো!

ওয়াহিদা, থামো,
ওয়াহিদা!

পড়ে যাবে, ওয়াহিদা।

ওয়াহিদা....

হেই, রসুল!

তোকে ভেতরে ডাকছে।

- কোথায় খেলছে ও?
- এ যে রসুল এসে গেছে।

উনি তোকে ডাকছিলেন।

জনাব তোর অপেক্ষায়।

এসো রসুল, এসো।

তোমরা পাঁচজন আজ বর্ডার পার হবে।

আর আল্লাহর রহমতে,
কাশ্মীরে পা রাখবে।

কাশ্মীর।
কেন হুজুর?

অপারেশন জিব্রাল্টার।

আসসালামু আলাইকুম, জনাব।

ওয়ালাইকুম আসসালাম।

আশরাফ শারিন।

৮ এ কে সম্মুখ ব্যাটালিয়ন।

ওহ! ৮ এ কে?

- এরা কারা?
- জঙ্গি স্যার।

এখানে কী করছে?

অপারেশন জিব্রাল্টারের প্রস্তুতি নিচ্ছে, স্যার।

কী? অপারেশন জিব্রাল্টার?

সেটা কী?

কাশ্মীর দখলের জন্য পাকিস্তানি সেনা
আর জঙ্গিদের যৌথ অপারেশন।

হয়তো তারই প্রস্তুতি চলছে, স্যার।

প্রস্তুতি?

কী বলছো এসব?

বুঝিয়ে বলছি, রসুল...

কাশ্মীরে কোরআন আর গীতা
পড়া লোক গলাগলি করে থাকছে...

এর কারন হচ্ছে ভারতীয় সেনা।

আজকাল কাশ্মীরের মুসলমানদের
ভারতীয় সেনাদের উপর বিশ্বাস বেড়েই চলছে।

আমাদের সেই বিশ্বাস ভাঙতে হবে।

কিন্তু কিভাবে?

আমাদের কে সাহায্য করবে?

ভারতীয় সেনারা নিজেই।

তোমরা কাশ্মীরে ভূমিকম্প আনতে যাচ্ছো।

নারায়ে তাকবীর!

আল্লাহু আকবর।

নারায়ে তাকবীর!

আল্লাহু আকবর।

গর্দভ!

আর্মি কেন জঙ্গিদের সাথে কাজ করবে?

আমায় এমন কোনো তথ্য দেওয়া হয়নি।

আমায় গাড়িটা জব্দ করতে হবে।

- হ্যালো!
- মর্নিং স্যার।

ক্যাপ্টেন তারিক।

- একটা সমস্যা হয়েছে।
- আমি জানি, তারিক।

ওদের ঠিকভাবে গন্তব্যে পৌঁছাতে
সাহায্য করা তোমার দায়িত্ব।

- কিন্তু আমায় এমন কোনো আদেশ দেওয়া হয়নি স্যার।
- এখন আদেশ দেওয়া হলো, তারিক।

এটাকে রেকর্ডের বাইরে রাখো।

ঠিক আছে, স্যার।

হুম!

আসসালামু আলাইকুম, জনাব।

ওয়ালাইকুম আসসালাম।

মেজর তারিক!

আমি ভারতীয় সেনাদের সাথে ক্রিকেট
খেলার জন্য পিচ প্রস্তুত করে দিচ্ছি।

যান আর খেলুন।
ট্রফি নিয়ে ফিরে আসুন।

কাশ্মীর।

তো, তোমরা জানো তোমাদের
কাশ্মীর গিয়ে কী করতে হবে।

কাশ্মীরে গিয়ে স্থানীয়
সেজে থাকতে হবে।

আর?

কারো সন্দেহ জাগানো যাবে না
যে আমরা মুজাহিদিন।

ওয়াহিদার খেয়াল রেখেন।

খোদা হাফেজ।

এদের বয়স ১৮ ও হয় নি।

সবাই অপ্রাপ্তবয়স্ক।

এই স্ফূলিঙ্গগুলোই একদিন
কাশ্মীরে আগুন হয়ে জ্বলবে।

আর সব বরফ গলিয়ে পানি বানিয়ে দেবে।

[বিশ বছর পর]

গতকাল রাতে ভারতীয় আর পাকিস্তানি
ছাত্রদের মধ্যে দাঙ্গা শুরু হয়।

যেটার ফল গিয়ে দাঁড়ায়
পাকিস্তানি পতাকার অসম্মানে।

যা পরিস্থিতিকে আরো খারাপ এবং
পাকিস্তানি ছাত্রদের ক্রোধ বাড়িয়ে দেয়।

আমাদের সংবাদদাতার কাছে চলে যাবো,

যিনি কিনা লন্ডনে পাকিস্তানিদের
যুব প্রেসিডেন্ট এর সাথে রয়েছেন।

হাই, ইনি হলেন পাকিস্তানি
যুব প্রেসিডেন্ট, আফরিন।

মিস. আফরিন বর্তমান পরিস্থিতি
নিয়ে আপনার কী ভাবনা?

মিডিয়ায় এটা যেভাবে দেখানো হচ্ছে
তাতে আমরা একদমই খুশি নই।

আমরা দেখিয়ে দেব, আমরা কারা।

এটা ভুল করে হওয়া কোনো ঘটনা না।

আমরা জানি ওরা ভেবেচিন্তেই
এমনটা করেছে।

আমরা কালকের মধ্যে এর জবাব দেব।

দেখিয়ে দেব আমরা।

কিভাবে ভারতীয়রা সবসময় পাকিস্তানি
পতাকাকে অবমাননা করার চেষ্টা করে।

এক বোতল হুইস্কি, প্লিজ।

কোনটা?

যেটা জ্বলে।

পাকিস্তান জিন্দাবাদ!

আফরিন কোথায়?

ওর কোনো ধারণা আছে
এখানে কে অপেক্ষা করছেন?

আনন্দ মেহতা।

যেই গাড়িটা কালকে পুড়িয়েছো,
সেটা তার ছিল।

উনি অসংখ্য অসচ্ছল
শিক্ষার্থীর খরচ জোগান।

ডীন কথা বলেছে ওনার সাথে।

শুধু গিয়ে স্যরি বলো।

তুমি জানো উনি কে?

আমার আগ্রহ নেই।

হ্যালো!

আমি আনন্দ মেহতা।

আফরিন।

তোমার মতো এতো কম বয়সী এক তরুণী...

... এমন ক্রোধে পরিপূর্ণ কেন?

সহজ!

একটা সমাধানে আসার জন্য।

তোমার ক্রোধ, ঘৃণা আর সহিংসতার
একটিই মাত্র সমাধান আছে।

তা হলো ভালোবাসা।

ওহো!

তো, আপনি সেই ধরনের লোক যে এক গালে
চড় মারলে আরেক গাল বাড়িয়ে দেয়। ঠিক?

আপনাদের ঐ গান্ধীর মতো?

আফরিন!

নিজের ব্যবহার সংযত করো।

মি. আনন্দ! আমি দুঃখিত।

আপনি না, ডীন।

ওর আমাকে দুঃখিত বলতে হবে।

সেটা হবে না, ডীন।

অসম্ভব।

অন্য কোনো অপশন আছে?

যথেষ্ট হয়েছে।

তোমাকে এই মুহূর্তে এই প্রতিষ্ঠান
থেকে বহিষ্কার করা হলো।

না, ডীন।

আমি কখনো চাইবো না, কোনো বাচ্চার শিক্ষা
বা ভবিষ্যৎ আমার কারনে নষ্ট হোক।

আফরিন...

ভুল সবাই করে।

সেটা স্বাভাবিক।
বড় কোনো ব্যাপার না।

তবে কী জানো আফরিন?

যাদের ক্ষমা চাওয়ার সাহস নেই,
তাদের ভুল করারও কোনো অধিকার নেই।

নিজের ভুল উপলব্ধি করো আর ক্ষমা চাও।

নয়তো, অন্য যে অপশন আমি
তোমায় দিতে পারি তা হলো...

এক মাস সময়...

আমার গাড়ির এক মিলিয়ন ক্ষতিপূরণ দাও।

নাহলে এরপর...

তোমায় বরখাস্ত করা হবে।

এবং আমি নিশ্চিত করবো যাতে...

তোমার ঠিকানা জেলে হয়।

সেই কথাই থাকুক।

আমি এক মাসে আপনার
দশ লাখ শোধ করে দেবো।

হুম?

দুই বছর হয়ে গেছে, নিজের
দাদার সাথে কথা বলিস নি।

চাওয়ামাত্রই উনি দশ লাখ দিয়ে দেবেন?

আফরিন, এক স্যরির দাম দশ লাখ।

এক মিলিয়ন!
ভাব একবার।

দাদার কাছে বরং স্যরি বলে নেব,

কখনো কোনো ভারতীয়ের কাছে না।

আমি তোমায় জানানোর জন্য
শতবার কল করেছি।

হয়তো তুমি ধরতেই চাওনি।

যদি ধরতে, তবে জানতে...

ব্রিগেডিয়ার আবু তারিক আর বেঁচে নেই।

কিভাবে মারা গেলেন?

তোমার চিন্তায় চিন্তায়...

আমায় ভিলেন বানিয়েন না। উনি নিজেই
আমাকে জোর করে লন্ডনে পাঠিয়েছিলেন।

তুমি জানো, উনি যা করেছে,
সব তোমার ভালোর জন্য।

কে বলেছিল যে লন্ডন আমায় বদলে দেবে?

হাহ?

নিজের দেশকে ভালোবাসা কি ভুল?

কে বললো সেটা?

নিজের দেশকে ভালোবাসা ভুল নয়।

তবে প্রতিবেশী দেশকে ঘৃণা করাটা ভুল।

তো তুমি এখন এসেছ কেন?

আমার এই মুহূর্তে
১০ লাখ টাকা প্রয়োজন।

আমায় দিয়ে দিন,
আমি চলে যাচ্ছি।

দেখুন, চাচা, আমার কাছে
আপনার মৌনতার জন্য সময় নেই।

উনি আমার দাদু ছিলেন।

কিছু তো ছেড়ে গেছেন আমার জন্য?

প্রিয় আফরিন...

যখন তুমি ফিরে আসবে,
হয়তো আমি আর থাকবো না।

হয়তো এই চিঠিই তোমার
আর আমার শেষ কথা।

আমি তোমাকে তোমার ইচ্ছের
বিরুদ্ধে লন্ডন পাঠিয়ে দিচ্ছিলাম,

আর তুমি পেছন না ফিরেই চলে গেলে।

তোমার রাগে আমি মুগ্ধ হয়েছিলাম।

এটা সত্যি যে আমি কষ্ট নিয়ে মারা যাচ্ছি।

কিন্তু তার কারন তুমি নও।

আমি নিজেই।

আমি আমার প্রতিজ্ঞা ভেঙেছি।

লে. রামকে দেওয়া আমার প্রতিজ্ঞা।

বিশ বছর আগে,

লে. রাম আমায় একটা
দায়িত্ব দিয়ে ভরসা করেছিলেন।

তোমায় অবশ্যই এই চিঠিটা
সীতামহালক্ষ্মীর কাছে পৌঁছাতে হবে।

জানি না, কত আগ্রহ নিয়ে
সীতা এটার জন্য অপেক্ষা করছে,

অথবা কী গল্পই লেখা রয়েছে এই চিঠিতে।

এই সাহায্যটা তোমার দাদু
তোমার কাছে চাইছে।

একটা ঋণ যা তোমায় শোধ করতে হবে।

এ এক যুদ্ধ যা এক সৈনিক তার
শত্রুর নিকট সঁপে দিয়েছিল, আফরিন।

তোমায় অবশ্যই সীতা আর রামকে
এই যুদ্ধে জেতাতে হবে।

অবশ্যই তাদের জেতাতে হবে, আফরিন।

কী এসব?

উনি আমায় পিয়নের কাজ দিয়ে গেছেন?

একজন পাকিস্তানি সৈনিক কেন
ভারতীয় সৈনিকের সাথে বন্ধুত্ব করতে যাবে?

অর্থহীন!

আগে আমার টাকার ব্যবস্থা করুন।

আমি এই চিঠি পাঠিয়ে দিচ্ছি।

স্যরি।

এই চিঠি সীতামহালক্ষ্মীর
কাছে না পৌঁছানো পর্যন্ত,

আমি তোমায় সম্পত্তির
এক কড়িও দিতে পারবো না।

তোমার দাদু উইলে এমনই
লিখে রেখে গেছেন।

এটা তোমার দাদুর চাওয়া
কোনো সাহায্য নয়।

একটা ঋণ যা তোমায় শোধ করতেই হবে।

সীতা...রাম...

অনুবাদ ও সম্পাদনায়ঃ
:.:.: তানভীর আহাম্মেদ লিওন :.:.:

আমি ক্যাপ্টেন আকরাম বলছি।

আশা করি আপনারা ভ্রমণটি উপভোগ করছেন।

এআই ৩৭২ মাত্রই ভারতীয়
আকাশ সীমানায় প্রবেশ করেছে।

শীঘ্রই আমরা অবতরণ করবো।

ট্যাক্সি! ট্যাক্সি!

কোথায় যাবেন, ম্যাডাম?

নূরজাহান প্রাসাদে চলো।

১৯৬৬ সালে, রাজকন্যা নূরজাহান,
মেয়েদের উচ্চশিক্ষার জন্য...

ওনার প্রাসাদ সরকারকে দান করে দেন।

যদি তুমি প্রাসাদের ব্যাপারে
আরো কিছু জানতে চাও,

প্লিজ কলেজের একজন ট্রাস্টী
সুভ্রামানিয়ামজির সাথে দেখা করো।

উনি সেসময় প্রাসাদের একজন
হিসাবরক্ষক ছিলেন।

বুঝতে পারছি না কী করব?

আমি দিশাহারা।

আমাদের একজন সিনিয়র,
বালাজি, আছে হায়দ্রাবাদে।

ও তোকে সাহায্য করবে।
ঠিক আছে?

রাম... সীতা...

বালাজি... এরকম নাম নয়।
[বালাজি হনুমানের আরেক নাম। রামায়ণে যে
রাম-সীতাকে এক করতে সাহায্য করেছিলেন।]

আমাদের কারো নাম থাকলে বল। গর্দভ!

তোর এখন আমাদের
লোকেদের দরকার নেই।

- এমন কাউকে দরকার যে সাহায্য করতে পারবে।
- যাইহোক।

- কত?
- দুই রুপি।

নমষ্কার, জুনিয়র।

বালাজি! চিনতে পেরেছো?

ভারতে স্বাগতম।

শুনলাম তোমার সাহায্যের প্রয়োজন?

চিন্তা করো না।

বালাজি আছে তো।

সব সামলে নেবে।

তো কাজটা কী?

এই চিঠিটা পৌঁছাতে হবে।

একটা চিঠি দেওয়ার জন্য
নিজে এলে কেন?

ডাকে দিয়ে দিতে! পৌঁছে যেত।

উল্টে দেখো।

ওহ! ফিরতি স্ট্যাম্প।

দুইবার।
পাগলামি, ঠিক না?

তো, সেই চেষ্টা করা হয়েছিল।

- আহ?
- বিশ বছর আগে।

১৯৬৫ সালে লেখা একটা চিঠি নিয়ে,
তুমি ১৯৮৫ তে প্লেনে করে এসেছো?

কে লিখেছে এই প্রত্নসম্পদ?

রাম।

- কে এই রাম?
- জানি না।

বাদ দাও।

- সীতা কে?
- জানি না।

একেও বাদ দাও।

এটা কি অন্তত জানো এই
চিঠিতে কি লেখা আছে?

না, বালাজি।

বিশ বছর পরে তুমি এখানে
এই চিঠি পৌঁছাতে এসেছো...

আর আমি আমার বিয়ের কাজ ফেলে
তোমায় সাহায্যের জন্য ছুটে এসেছি!

হয়তো তোমার কিছু কাণ্ডজ্ঞান থাকা উচিত ছিল,
নয়তো আমার কিছু লজ্জা।

এ সব হয়েছে আনন্দ মেহতার জন্যে।

এই নতুন চরিত্রটি কে?

অনেক লম্বা কাহিনী, বালাজি।

যেতে যেতে কথা বলা যাক।

তোমার ঠাকুরদা তার মৃত্যুশয্যায়
একটা চিঠি দিয়ে গেছে।

এই চিঠিটা তুমি সীতার হাতে দিলে তবেই...

উকিল তোমাকে সম্পত্তির দলিল দেবে।

বাহ, জুনিয়র!

আমিও আসলে ভাবছিলাম,

তুমি তো নিজ স্বার্থ ছাড়া
কড়ে আঙুলটাও নড়াও না।

এই যে।
এটাই সুভ্রামানিয়াম এন্ড কোং এর ঠিকানা।

সীতামহালক্ষ্মী।

আহ, আহ, আহ!

এই নামে প্রাসাদে কেউ নেই, মিস্টার।

স্যার! স্যার, মনে করার চেষ্টা করুন।
প্লিজ।

স্যার?

কী করছেন?

তুমিই তো মনে করতে বললে?

আমি এটা বুঝাইনি, স্যার।

এ অন্য দেশ থেকে
এতোটা পথ এসেছে। তাই।

অন্য গ্রহ থেকে এলেও,
আমার জবাব বদলাতো না।

সেটা নয়, স্যার।

- এটা কী ছিল তাহলে, থামো।
- হাহ?

- দেখো, সোনা।
- স্যার!

আমি প্রাসাদে ৪০ বছর কাজ করেছি।

ওখানে ৪০০ এর বেশি কর্মী কাজ করতো।

ঐ বেশি-কমের মধ্যে...

হয়তো আপনি সীতামহালক্ষ্মীকে ভুলে গেছেন।

ভাষার দিকে...

নজর রাখাটা জরুরি।

ঐসময় বেতন আমিই দিতাম।

নিজামের প্রাসাদ ছিল।

হিন্দুদের সংখ্যা ৩০ এর বেশি হবে না।

- তো এই সীতামহালক্ষ্মী?
- পাবে না তাকে।

কেন?

কারন সীতামহালক্ষ্মী নামে কেউ
ভূত, বর্তমান বা ভবিষ্যতেও নেই।
[ভূত=অতীত]

এখন আবার ভূতের ব্যাপারে কথা কেন, স্যার?

তোকে মেরেই ফেলব।

মূসা নদীতে চুবাব যদি
আর বিরক্ত করিস।

আমায়?

হ্যাঁ, তোকে।

- হেই, গণপতি!
- স্যার।

আমার ভয় হচ্ছে এর কথা
শুনতে শুনতে মরেই যেতে পারি।

এদের গুদাম ঘরে ছুড়ে মার।

আর খুঁজতে দে।

সীতামহালক্ষ্মী...

সীতার নাম কোথাও নেই।

হ্যালো?

আহ...আফরিন! কেমন আছো তুমি?

একদমই ভালো না।

এটা এখন আর প্রাসাদ নেই।
কলেজ হয়ে গেছে।

আর এখানে সীতামহালক্ষ্মী
নামের কেউ নেই।

বুঝতে পেরেছেন?

এজন্যেই এই চিঠি এতোবার ফেরত এসেছে।

আফরিন, সেটা আমার সমস্যা নয়।

সত্যি বলার বদলে,

যদি আমি মিথ্যে বলতাম যে চিঠি দিয়ে দিয়েছি
আর চিঠিটা কোনো ডাস্টবিনে ফেলে দিতাম,

কী করতেন আপনি?

তুমি ভুল করো।

কিন্তু তাই বলে তুমি নীতিহীন নও, আফরিন।

আমি জানি তুমি মিথ্যের সাহায্য নেবে না।

এই চিঠি সীতার কাছে পৌঁছানো
তোমার দাদুর শুধু ইচ্ছেই ছিল না।

তার বিশ বছরের ব্যর্থতাও ছিল।

এখন তোমার দায়িত্ব তোমার
দাদুকে জেতানো, আফরিন।

চিঠিটা খুলে পড়লে, হয়তো
কোনো সমাধান পেতে পারো।

আমার দাদুও তা করতে পারতেন।

কিন্তু উনি তাই করতে চেয়েছিলেন,
যেটা রাম করতে বলেছিল।

দুই শত্রুর মধ্যে এ কিসের সম্পর্ক?

সে তো রামই জানবে।

১৯৬৫ তেই কেউ সীতার ব্যাপারে জানতো না,
১৯৮৫ তে কে কী জানবে?

তোমার টাইম ট্রাভেল শুরু হওয়ার
আগেই শেষ হয়ে গেছে।

নাহ। কেবল শুরু হয়েছে।

সেটা কিভাবে?

তুমিই তো বললে।

যে রামই জানবে।

সীতাকে খোঁজার জন্য, আমাদের আগে
রামের ব্যাপারে জানতে হবে।

রামের ব্যাপারে জানতে পারলে,
সীতাকে খোঁজা সহজ হয়ে যাবে।

ও অযোধ্যার রাম নয় যে
চাইলেই তথ্য পেয়ে যাবে।

- শুধু লেফটেন্যান্ট রাম।
- একদম।

লেফটেন্যান্ট রাম।

- মাদ্রাজ রেজিমেন্ট।
- তো?

- সার্ভিসের সাল ১৯৬৫।
- তো?

খুঁজে বের করার জন্য এটুকু যথেষ্ট।

কিন্তু কিভাবে?

বালাজি আছে তো।
সব সামলে নেবে।

কিছু করুন না, জেঠু।

ভাইপো! তুমি কি ভেবেছো?

এটা কি মুদির দোকান যে,
যা তথ্য চাইবে দিয়ে দেওয়া হবে?

এটা ভারতীয় আর্মি।

তুমি রামের ব্যাপারে জানতে সেই
লন্ডন থেকে এখানে আসলে কেন?

আহ...আমি একটা বই লিখছি, স্যার।

- ছোট্ট অনুসন্ধানমূলক বই।
- ওহ!

নিচতলায় একটা লাইব্রেরি আছে।
সোমবার জনসাধারণের জন্য খোলা থাকে।

কিছু পেলে?

না, স্যার।

চেষ্টা চালিয়ে যাও।

কিছু পেতেও পারো।

রাম!

- বালাজি! বালাজি!
- হাহ?

দেখো, রাম!

- এই যে চেকমেট।
- এক্সকিউজ মি, স্যার।

- এক্সকিউজ মি, স্যার।
- জি।

এই যে রাম।

রাম?

হুম। আমি চিনি না একে।

ওহ!

এ আমাদের এখানের বিকাশ।

আমি নিশ্চিত ও রামকে চেনে।

হাহ! ওনার ঠিকানাটা দেওয়া যাবে?

বিকাশবাবু।

লেফটেন্যান্ট রামের ব্যাপারে
আপনার সাথে কথা বলতে পারি?

লেফটেন্যান্ট রামের ব্যাপারে
কথা বলতে চাচ্ছিলাম।

লেফটেন্যান্ট রাম!
লেফটেন্যান্ট রাম!

পরে কল করছি...ঠিক আছে?

- জয় হিন্দ, স্যার।
- আরামে দাঁড়াও।

ওভার!

৩১২ এর কোনো আপডেট?

তাদের রেশনের মজুদ
চারদিন আগে শেষ হয়ে গেছে, স্যার।

কমান্ডিং অফিসার বিষ্ণু শর্মার
সাথে মাত্রই কথা হলো।

গত ১৫ দিন ধরে ক্রমাগত
তুষারপাত হচ্ছে, স্যার।

সকল রাস্তা বন্ধ হয়ে আছে।

পৌঁছানোর রাস্তা খুঁজে বের করতে
দুইদিন সময় লাগতে পারে, স্যার।

হুম। ঠিক আছে।

জয় হিন্দ, স্যার।

রবীন্দর, আমায় একটু গরম পানি দাও।

স্যার, আজকের জন্যই হবে।
আগামীকালের নিশ্চয়তা নেই।

কেরোসিন ফুরিয়ে যাবে, স্যার।

স্যার!

তুষার কমে এসেছে।

নাভীন!

লেফটেন্যান্ট রামের সাথে কানেক্ট করো।

টাইগার ইন... টাইগার ইন...

চার্লি কাম ইন... চার্লি কাম ইন...

নিজের লোকেশন জানাও।

টাইগার ইন...টাইগার ইন।

চার্লি রিপোর্টিং, স্যার।

বেসের উত্তর-পূর্ব দিকে ৫০০ মিটার দূরে।

আমাদের ইউনিট থেকে কাউকে আসতে দেখছো?

না, স্যার। নেগেটিভ।

আজও আমাদের জন্য কোনো খাবার নেই।

স্যরি, ছেলেরা।

টাইগার কাম ইন... টাইগার কাম ইন...

টাইগার ইন।

স্যার, কিছু নড়াচড়া দেখা যাচ্ছে।

কী?

সামনে এগোও...এগোও।

ঠিক ঠিক বলো কী দেখছো?

পাঁচজন বেসামরিক... চারটা খচ্চর।

জঙ্গি?

সম্ভাবনা রয়েছে স্যার।

মনে হয় ওরা মুজাহিদিন নয়, স্যার।

কিভাবে বলছো?

স্যার, ঘোড়ার পাঁয়ে বাঁধা
হলুদ কাপড় দেখে।

বুট্টাদের প্রথা, স্যার।

দরগায় প্রার্থণার পর বেঁধে দেয়, স্যার।

যদি ওদের কাছে অস্ত্র থাকে?

না। স্যার। আমায় বিশ্বাস করুন।

এরা অবশ্যই কাশ্মীরী মুসলিম।

যদি ওরা আগে গুলি চালায়?

আমি আমার সেনাদের জীবন
ঝুঁকিতে ফেলতে পারি না।

আদেশ দিচ্ছি। গুলি চালাও!

গুলি চালাও!

গুলি থামাও।

বেরিয়ে এসো।

সরো।

স্যার!

রাম ঠিক বলেছিল।

এরা কাশ্মীরী মুসলিম।

১৫ দিন ধরে তুষার পড়ছিল।

আমরা ভাবলাম হয়তো আপনাদের
খাবার শেষ হয়ে গেছে।

তাই খাবার নিয়ে এসেছি।

স্যরি, স্যার।

ঠিকমতো নিশানা লাগেনি।

খারাপ আবহাওয়ার কারনে।

কাল সকালের মধ্যে আমার
পূর্ণ লিখিত ব্যাখ্যা চাই, রাম।

বন্দুক নামাও!

- মাফ করবেন, ভাই। ভুল হয়ে গিয়েছিল।
- স্যার…

ভুল তো হয়েই থাকে।

আপনারা খাবার খেয়ে নিন।

বিষ্ণু স্যার এখনি তোকে
সহ্য করতে পারে না।

হিংসে করে।

মনে হয় না, উনি তোর ব্যাখ্যায়
সন্তুষ্ট হবেন, সাজা দিয়েই ছাড়বেন।

যখন আমি লোকটাকে বললাম
আমি ভুলের জন্য দুঃখিত...

উনি হেসে বললেন ঠিক আছে
আর আমায় আগে খাবার খেতে বললেন।

এমন নির্দোষদের মেরে সারাজীবন
অনুশোচনার চেয়ে সাজাই ভালো৷

আমি নিতে পারবো।

কিন্তু এটা সত্যি না যে,
বিষ্ণু স্যারের আমার সাথে ঝামেলা আছে।

তাহলে এসব কী?

জানি না।

জনাব!

কাশ্মীর থেকে সুখবর এসেছে।

আমাদের বাচ্চারা ছয় মাস ধরে
কাশ্মীরীদের সাথে মিলে মিশে গেছে।

এমনকি ওদের রেশন কার্ডও হয়ে গেছে।

ওরা এখন পুরোপুরি কাশ্মীরী।

আলহামদুলিল্লাহ।

খবরটা এই ছবির সাথে
জামিলের কাছে পৌঁছে দেও।

কোন খবর।

যে ঐ চার ছেলে মুজাহিদিন।

জামিলকে বলো ভারতীয় সেনাদের
এই টিপ দিতে।

এরপর আমি যুদ্ধ শুরু করে দেব।

কিন্তু আর্মিরা তো ওদের মেরে ফেলবে।

ওদের উদ্দেশ্যে এটাই।

সালাম, সাহেব।

মেজর সালভান স্যারকে বলুন,
জামিল এসেছে।

একটা খাস খবর নিয়ে।

জয় হিন্দ, স্যার!

সালাম, স্যার!

কোনো খাস খবর আছে, জামিল?

অনেক খাস খবর, জনাব।

আনসারি…

হঠাৎ এই মিটিং কেন, স্যার?

জরুরি কিছু?

জেন্টেলম্যান! খুবই গুরুত্বপূর্ণ
কিছু নিয়ে কথা বলার আছে।

প্লিজ, সবাই বসুন।

কী হয়েছে, স্যার?

চার মুজাহিদিন জঙ্গি কাশ্মীরে
স্থানীয় সেজে বাস করছে।

আর তা রয়েছে গত ছয় মাস ধরে।

স্যার, এরা সবাই অপ্রাপ্তবয়স্ক।

১৮ বা ২১ বছরের নিচে।

জিজ্ঞেস করার জন্য দুঃখিত।

খবরটা সঠিক তো...

সংবাদদাতা কে, স্যার?

জামিল।

ও কখনো ভুল খবর দেয়নি, রাম।

আমরা জানি না,
এদের পরিকল্পনা কী।

কিন্তু আমরা জানি,
আমাদের কী করতে হবে?

বিষ্ণু, আমার তোমার
সেরা কিছু ছেলেদের চাই।

ওদের চারটা দলে ভাগ করো
আর পরিষ্কার করো এদের।

স্যার!

তোমার টিমে সেরা লোক কারা?

অর্জুন, ভীরু, রঞ্জিত, বায়ু, শরৎ, গুরবীন্দর।

ধন্যবাদ।

ঠিক আছে। গুড লাক।

স্যার!

বিষ্ণু!

ঠিকভাবে সামলাও!

আর আমি এই মরার বাল্বটাকে সামলাই।

উনি কি ভগবান বিষ্ণু নাকি
যে হিংসে করবেন না?

উনি শুধু বিষ্ণু শর্মা।

হেই, আব্বাস বাড়ি আছে?

কী চান আপনি?

হেই, ইকবাল!

স্যার! ঐ যে ঐ ছেলে।

হেই, থামো!

হেই!

হেই!

থামো!

হেই, থামো।

থাম!

হেই। থাম!

হেই! না!
না, না, না!

গুলি চালাচ্ছ কেন?

এই...!

এই তো চেয়েছিল আনসারি!

এজন্যই ঐ জঙ্গিদেরকে
বর্ডার পার করিয়েছিল।

আমাদের হাতে শিশুদের খুন করিয়ে,
কাশ্মীরকে আমাদের থেকে দূর করে দিতে।

কিছু একটা ঘটতে যাচ্ছে।

সেটা বের করতে আমাদের
আগে জামিলকে ধরতে হবে।

ভারতীয় সেনাদের জুলুমে
কাশ্মীর উপত্যকায় চার শিশু খুন...

প্রথমবারের মতো এর জবাবে...

- জামিলকে খুঁজে বের করো।
- ঠিক আছে, স্যার।

কেমন আছেন ভাই?

দুটো চা দেও তো।

এখানে কোনো জামিলকে চেনো?

এখানে আর্মিদের কোনো
খবর বা চা দেওয়া হয় না।

হেই? কী বললে?

চলে যান এখান থেকে।

নয়তো, আপনাদের উপরও পাথর পড়বে,
যান।

গতকালই তো খাবার দিতে
কোথায় পৌঁছে গিয়েছিল...

হঠাৎ এই পরিবর্তন?

স্যার! সব রাস্তা খালি, স্যার।

- জামিলের ব্যাপারে বলার মতো কেউ নেই।
- একটা কাকপক্ষীও না।

স্যার, জামিলের ব্যাপারে কোনো খোঁজ পাইনি।

দেখে কোনো কার্ফু মনে হচ্ছে।
সবাই কোথায়?

বড় কিছু হতে যাচ্ছে।

কতদিন?

কতদিন আমরা এসব সহ্য করে যাবো?

আমাদের মহিলাদের অসম্মান করা হচ্ছে।

কাশ্মীর কাদের?

আমাদের, মুসলিমদের।

ঐ হিন্দুদের নয়।

আর্মিদের সাথে হাত মিলিয়ে এই কাফিররা
আমাদের বাচ্চাদের রক্ত দেখছে।

ওদের নির্দয়ভাবে খুন করলো।

আমাদের চোখের সামনে।

জিহাদের সময় এসে গেছে।

যদি তোমরা এখনই জেগে না উঠো,
ইসলাম নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে।

তোমরা কি ইসলামের বিলুপ্তি দেখতে চাও?

এটাই কি চাও তোমরা?

জিহাদ শুরু হবে আগার্তা থেকে।

আজই আগার্তা জ্বালিয়ে দাও।

সূর্যাস্তের পূর্বেই।

নারায়ে তাকবীর।

আল্লাহু আকবর!

নারায়ে তাকবীর।

আল্লাহু আকবর!

সেনাদের বেস থেকে আগার্তা
পৌঁছাতে ৪ ঘন্টা লাগবে।

- নান্দা! সেনাদের খবর দাও।
- ঠিক আছে, স্যার।

আগার্তায় এমনটা হওয়া ঠেকাতে হবে।

এদের সংখ্যা তো অনেক।

আমরা তো এও জানি না, এদের চেয়ে সংখ্যায়
কত বেশিরা আমাদের মারতে আসবে।

- সবাইকে জানিয়ে দিই।
- না।

বেশ বিপজ্জনক। এরা যদি এখানে
হতে যাওয়া নৃশংসতা সম্পর্কে জানতে পারে,

হিন্দু আর মুসলিমে দাঙ্গা বেঁধে যাবে।
সেটা হতে দেওয়া যাবে না।

ব্যাপারটা তা না।

কাউকে কিচ্ছু জানানো যাবে না।

আমাদের আগে গ্রামটা খালি করতে হবে।

কাউকে না জানিয়ে সেটা কিভাবে করবো?

আমার কাছে কোনো প্লান নেই।

তোমাদের কারো কাছে থাকলে বলো।

যখন গ্রামবাসীরা শুনলো,
কেউ তাদের বাচ্চা তুলে নিয়ে গেছে,

তারা রামকে আগার্তায় একা ফেলে
আমার পেছনে ছুটলো।

রাম বাকি বাচ্চা আর বুড়োদের একটা
সেফ হাউজে লুকিয়ে রাখলো।

নিরাপদে থেকো।

কিন্তু রামকে সেদিন শুধু
আগার্তার হিন্দুদেরই না,

আনসারির কথায় বিভ্রান্ত
মুসলমানদেরও বাঁচাতে হতো।

গায়ের লোক আগেই খবর পেয়ে গেছে।

জ্বালিয়ে দাও সব।

হ্যাঁ, হ্যাঁ। জ্বালিয়ে দাও।

জ্বালিয়ে দাও।
জ্বালিয়ে দাও।

সবাই ভেতরে।

তোমরা হিন্দুদের সাথে মিলে,
আমাদের মেরেছো।

আর সহ্য করবো না।
সবকিছু জ্বালিয়ে দেব।

- কাশ্মীর আমাদের।
- এ আমাদের জেতার সময়।

কার বিরুদ্ধে?

কাদের বিরুদ্ধে?

কে বললো আপনাদের এটা জয়?

এখানে একটা প্রাণও যদি যায়,
আপনি তাতে জয়ী হবেন না।

জয়ী হবে শুধু আনসারি।

আপনার কাছে দয়া ভিক্ষে চাইছি।

ঐ বাচ্চাগুলো আসলেই মুজাহিদিন ছিল।

পায়ে পড়ছি আপনার।

বিশ্বাস করুন।

আনসারি আপনাদের জন্য লড়ছে না।
কাশ্মীরের জন্য লড়ছে।

আপনাদের কেবল ব্যবহার করছে।

একেও আগুনে ফেলো।

জামিল! আগুন লাগাও!

জামিল!

হেই, কী করছো?

হেই!

ভালো হয়েছে যে তুই এদের সাথে এসেছিস।

নয়তো, সত্যিটা কখনো সামনে আসতো না।

সত্যিটা বল এদের।

না, না, না!

আমায় জ্বালিও না, প্লিজ না।

আমি বলছি। সব বলছি।

বলছি।

ওরা আসলেই জঙ্গি ছিল।

এই পাঁচজনকে আজই
বর্ডার পার করিয়ে দিতে হবে।

এখন, ঐ....

এক হাজার।

খবরটা ভারতীয় আর্মি অবধি পৌঁছে দেও।

অনেক খাস খবর, জনাব।

আনসারির ভারতীয় সেনাদের
মুসলিমদের থেকে দূর করার চক্রান্ত...

- সেদিন ঐ আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে যায়।
- স্যার! বড় ভুল করে ফেলেছি।

ক্ষমা করে দেন, স্যার!

আগার্তায় মুসলিমদের
আগুন নিভাতে দেখে,

হিন্দুরা তাদের ভাই হিসবে জড়িয়ে নেয়।

তারা ধর্মের দিক দিয়ে হেরে গেলেও,
মানবতার দিক দিয়ে জিতে যায়।

আমি সেদিন বুঝতে পারলাম।

অস্ত্র নিয়ে যে লড়াই করে
সে একজন সৈনিক।

আর ধর্মের জন্য যে যুদ্ধ করে,
সে হলো রাম।

আগার্তার ঘটনার পরে,

পুরো দেশ সেনাদের হিরো
হিসেবে দেখতে শুরু করলো।

তো, ম্যাডাম বিজয়ালক্ষ্মী অল ইন্ডিয়া রেডিও
থেকে আমাদের সাক্ষাৎকার নিতে এসেছিলেন।

তোমরা এতোগুলো পরিবার বাঁচিয়েছো।

কিন্তু নিজেদের পরিবার থেকে দূরে।

যদি তোমাদের পরিবারের কাছে
কিছু বলার থাকে, বলতে পারো।

কিছুদিন আগেই আমার মেয়ে হয়েছে।

শুনেছি, দেখতে নাকি আমার মতো।

আমার ওর একটা নাম দিয়ে,
তিনবার ওর কানে বলা উচিত।

কিন্তু আমি এখনো এখানে।

তুমি এখনি বলে দেও না?

এখন?

হেই, রাম!

তোর সাহায্য দরকার!

- কী?
- বস!

আমার মেয়ের জন্য চমৎকার
একটা নাম চাই। কিছু বল।

অমৃতা?

বেশ ভালো।

অমৃতা।

অমৃতা।

অমৃতা।

ওহো!

হু!

লেফটেন্যান্ট রাম!
ব্যাটালিয়নের হিরো!

তুমি তোমার পরিবারকে
কিছু বলতে চাও?

আমার কেউ নেই, ম্যাডাম।

এই ব্যারাকের বাইরে আমার কেউ নেই।

কী?

আমি একজন একলা সৈনিক।

স্বতন্ত্র সৈনিক।

রাম!

আসছি।

লেফটেন্যান্ট রামের নাম
আমি গতকালই প্রথম শুনেছি।

কাশ্মীরের পাহাড় পাহারা দেওয়া
এক একেলা সৈনিক।

কালকেই আমি জানতে পারি,

যে তার সাথে কথা বলার মতো কেউ নেই।
অথবা অন্তত চিঠি লেখার মতোও।

দেশের জন্য রাম আছে।

আমাদের দায়িত্ব, রামকে বলা,
যে ওর জন্য আমরা আছি।

আমি আমার ছেলে রামের জন্য
কালই একটা চিঠি লিখেছি।

এবার, আপনাদের পালা।

ওহ, স্যার! এক মিনিট।

আপনার জন্য চিঠি এসেছে।

চিঠি?

হ্যাঁ, অনেকগুলো।

আমার জন্য?

প্রিয় ভাই রাম!

রেডিওতে তোমার আর
তোমার গল্প সম্পর্কে শুনলাম।

এখন থেকে এটা মিথ্যে যে
তোমার কেউ নেই।

কেবল গত সপ্তাহেই তোমার ভাগ্নী
তার জন্মদিন পালন করেছে।

আমি 'আরিসেলু' বানিয়েছি।

ভাবছি তোমার ভাগ্নীর কান ফোঁড়াবো,
তুমি ছুটি নিয়ে কবে আসবে?

আশা করছি তুমি আসবে।

প্লিজ, চিঠি লিখে জানিয়ে দিও।

তোমার,

তোমার বোন,
রাধিকা।

রাম সারারাত বসে
চিঠিগুলোর জবাব লিখলো।

নিজেও ঘুমাল না।

আমাদেরও ঘুমাতে দিল না।

স্যার!

আমার দুই মাসের ছুটি চাই, স্যার!

এতো লম্বা ছুটি কেন?

আমার পরিবারের সাথে
দেখা করতে চাই, স্যার।

ঠিক আছে।

কী?

পিয়ন বাহাদুরের অপেক্ষা করছিস?

- হ্যাঁ, তিন ঘন্টা দেরি!
- হাহ!

- ওর তো কোর্ট মার্শাল হওয়া উচিত!
- ওহ!

থামো, থামো, থামো।

- আমার চিঠিগুলো কোথায়?
- স্যার।

এগুলো জবাব।
দ্রুত পাঠিয়ে দিও।

এক মিনিট।
এক মিনিট।

আরিসেলু।

আমার বোন পাঠিয়েছে।

প্রিয় রাম!

তোমার কেউ নেই?

এইরকম মিথ্যে কোত্থেকে শিখলে?

তুমিতো দেখছি একদমই ভুলে গেছো,
ঘরে তোমার একজন স্ত্রীও আছে।

স্ত্রী?

সীতামহালক্ষ্মী...

তুমি সেই "এখনি ফিরে আসছি"
বলে চলে গেলে।

আমায় আমার বাবা-মায়ের কাছে রেখে।

আমার পরিবার অবশ্য সাবধান করেছিল,

যে এ আর্মির লোক,
ঘরে থাকবে না।

কিন্তু আমি কি তাতে কান দিয়েছিলাম?

হুম। বিয়ে আমি করেছি তো,
আমাকেই পোহাতে হবে।

আমায় স্মরণে এনো না।

তোমার,
সীতামহালক্ষ্মী।

কী, ভগবান রাম?
কেমন আছেন আপনি?

ওহ আপনি স্বয়ং।
ভালোই থাকবেন।

এখানে কক্ষটা ঠান্ডা হয়ে আসছে।

তুমি কাশ্মীর থেকে পাঠাচ্ছো নাকি?

গতকাল থেকে বৃষ্টি হচ্ছিল।

মৌসুমও তোমার মতো।

আসে কিন্তু আমার সাথে
না থেকেই চলে যায়।

তুমি কখন ফিরে আসবে, রাম?

সর্বদা তোমার চিন্তায়,

তোমার স্ত্রী,
সীতামহালক্ষ্মী।

তোমার স্ত্রী,
সীতামহালক্ষ্মী।

প্রেরকের ঠিকানা দেওয়া নেই।

সীতা!

কে তুমি?

“তোমারি চিঠি পেয়ে দেখো,”

"কাভেরী ফুটছে, কাশ্মীর-উপত্যকায়।”

“বরফে ঘেরা এই পাহাড়ের গায়ে,
শস্য ফলছে তোমারই শব্দের ছোঁয়ায়।”

“পড়ে তোমার পাঠানো চিঠি,
হাসি ফোঁটে আমারই দু ঠোঁটে।”

“এই নির্লজ্জ হিম বাতাসে,
ওরা যেন গ্রীষ্মের ফুল হয়ে ফোটে।”

“কখন পাব দেখা তোমার?
শুধায় এই প্রাণ আমার।”

“ভাবনাগুলো জানাবে তোমায়,
সেদিন উষ্ণ স্বাগতম।”

জয় হিন্দ, স্যার!

শুনলাম তোমার বিয়ে হয়েছে।

আমায় বললে অবধি না!

আমিও জানতাম না, স্যার!

আরামে দাঁড়াও।

মেয়ের নাম কী?

সীতামহালক্ষ্মী, স্যার।

“কখন পাব দেখা তোমার?
শুধায় এই প্রাণ আমার।”

“ভাবনাগুলো জানাবে তোমায়,
সেদিন উষ্ণ স্বাগতম।”

“কখন পাব দেখা তোমার?
শুধায় এই প্রাণ আমার।”

“ভাবনাগুলো জানাবে তোমায়,
সেদিন উষ্ণ স্বাগতম।”

হেই, বিকাশ।

এই, রাম!

জানো?

আমার সাথে সাথে আমাদের বাড়ির
পেছনটাও তোমায় মিস করছে।

গাছগুলো ফুল দিচ্ছে না।

সেজন্য প্রজাপতিরাও
পালাতে শুরু করেছে।

তুমি কি আসার সময় ওদের নিয়ে আসবে?

বিদায়।

তোমার,
সীতামহালক্ষ্মী।

“জানি না আমি নিজে, কী করেছি এমন,
যে এমন করে, আমায় চাও তুমি?”

“করে নিয়েছো আমায়, একান্তই আপন,
বলে দাও, কী এমন পুণ্য আমার?”

ভাগ!

“ছোট্ট করে একটিবার, ইশারা করো যদি,”

“এক ছুটে, পেরিয়ে পাহাড়, আসবো কাছে তোমার।”

প্রিয় রাম!

আমাদের প্রতিবেশী মহিলা জিজ্ঞেস করছিল
আমাদের প্রথম দেখা কিভাবে হয়েছিল?

"কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে রাবণের নাশ...

আর যুদ্ধের দীপ্তেতে...
সীতার স্বয়ম্বর..."

যখন আমি এটা বললাম, ও হাসতে
হাসতে চলে গেল, যেন বুঝে গেছে।

তুমি ছাড়া কেউ এর অর্থ
বের করতে পারবে না।

কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে রাবণের নাশ?

আর যুদ্ধের দীপ্তেতে...
সীতার স্বয়ম্বর...?

আরেকটা কথা, আমি
গতরাতে একটা স্বপ্ন দেখেছি।

স্বপ্নে তুমি ষাট বছরের ছিলে।

তখনো আমার আশেপাশেই ঘুরঘুর করছিলে।

আর যেকোনো কিছুর জন্যই
'সীতা', 'সীতা' বলে ডাকছিলে।

আর তারপর সকাল হয়ে গেল।

যখন আমি আমার পাশে তাকালাম,
তুমি ছিলেই না।

বিদায়!
তোমার স্ত্রী,
সীতামহালক্ষ্মী।

“কখন পাব দেখা তোমার?
শুধায় এই প্রাণ আমার।”

“ভাবনাগুলো জানাবে তোমায়,
সেদিন উষ্ণ স্বাগতম।”

“কখন পাব দেখা তোমার?
শুধায় এই প্রাণ আমার।”

“ভাবনাগুলো জানাবে তোমায়,
সেদিন উষ্ণ স্বাগতম।”

জয় হিন্দ, স্যার।

জয় হিন্দ।

আপনার চিঠি এসেছে।

কী?

জি, স্যার।

প্রিয় রাম!

এই মাসের ১২ তারিখ আমি হায়দ্রাবাদ যাচ্ছি।

যখন আমি কাপড় গুছিয়ে নিচ্ছিলাম,
আমাদের বিয়ের পোশাক দেখতে পাই।

বিয়ের পোশাক!

ঐ পোশাকে তোমার লজ্জাভরা মুখ
আমার আজও পরিষ্কার মনে আছে।

হুম। ৪৮ ঘন্টার ভ্রমণ।

আমি একা একা কখনো
এতোদূর ভ্রমণ করিনি।

কিন্তু আমি সামলে নেব।

- হাজার হলেও আমি তো একজন...
- লেফটেন্যান্টের স্ত্রী।

এই মাসে হায়দ্রাবাদে অস্টিনের
এক জাদুর শো আছে।

তুমি এখানে থাকলে,
আমায় সঙ্গ দিতে পারতে। বিদায়।

তোমার স্ত্রী,
সীতামহালক্ষ্মী।

প্রেরকের ঠিকানা লেখা নেই।

দিল্লী।

- হেই বিকাশ!
- হাহ?

সীতাকে পেয়ে গেছি।

কী?

কোথায়?

দিল্লীর ট্রেনে।

- কবে?
- এ মাসের ১২ তারিখ।

- জলদি আয়।
- আসছি, আসছি।

ওরা আমায় শুধু ২০ দিনের ছুটিই দিয়েছে।

কতজনের সাথে দেখা করতে হবে।
খুব অল্প সময়।

- জয় হিন্দ, স্যার।
- জয় হিন্দ।

স্যার! আপনি এখানে কিভাবে, স্যার?

ছুটিতে এসেছেন?

- মিশনে এসেছি।
- ওহ!

এই ট্রেনে করে একজন
বিপজ্জনক মেয়ে যাচ্ছে।

হুম।

এখানে কোনো সীতামহালক্ষ্মী আছেন?

তো, এখানে কেউ নেই।

- টিসিকে খুঁজে আনো।
- জি, স্যার।

মেয়েটার ছবি আছে?

না।

দেখতে কেমন?

সেটাই তো মিশন।

তার ব্যাপারে কিছু না জেনে
কিভাবে খুঁজে বের করবো?

জানি তো।

ওর নাম সীতামহালক্ষ্মী।

আমাদের কাছে নাম-কুষ্ঠী নেই।

শুধু টিকিট।

প্লিজ, এভাবে বলবেন না।

- আমার ভবিষ্যতের ব্যাপার।
- আহ!

মানে...আমার মতো অনেকের ভবিষ্যতের ব্যাপার।

- আপনার হাতে, স্যার।
- কিভাবে?

হ্যালো!

আপনি এখন আর টিসি নন।

আপনিও এই মিশনের অংশ।

কিন্তু এরকম মিশনের ব্যাপারে
আমি আনাড়ি।

চিন্তা করবেন না।

- আমি আছিতো পাশে।
- হুম।

পরিকল্পনাটা কী?

- ট্রেন আপনার, তো প্লানও আপনারই।
- হুম।

সেক্ষেত্রে, আপনার পেছনের চার বগি
ভূপালে মাদ্রাজ মেইলের সাথে জুড়ে যাবে।

আমার পেছনের ১২ বগি হায়দ্রাবাদ
চলে যাবে, আমার সাথে।

এই বিপজ্জনক মেয়ে কোথায় যাচ্ছে?

হায়দ্রাবাদ।

- একে জিজ্ঞেস করুন।
- হুম।

টিকিট?

তোমাকে দেখতে একদম দেবী লক্ষ্মীর মতো।
তোমার নাম কি সীতামহালক্ষ্মী?

না। পার্বতী।

ধুর।

হুম

এই মিশন অসম্ভব মনে হচ্ছে।

ইতিমধ্যে ৮ বগি দেখা শেষ।

- হয়তো ঐ বিপজ্জনক মেয়ে ট্রেনে উঠেই নি।
- প্লিজ, একথা বলবেন না।

দেখুন এদের।

সব যাত্রীরা ঘুমাচ্ছে,
আপনাকে ভরসা করে।

- হুম?
- চলুন।

- এখনো চার বগি বাকি আছে।
- হুম।

ঘুমান।

নয়তো আমার নাম ডুববে।

এটা শেষ বগি।

এখানে বেশিক্ষণ থাকবেন না।

এটা শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত।
স্পেশাল বগি।

জি। ভেতরে আসুন।

ঐটাই শেষ কক্ষ।

টিকিট?

কে?

"কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে রাবণের নাশ...

আর যুদ্ধের দীপ্তেতে...
সীতার স্বয়ম্বর..."

রামজি?

তোমার চিঠিগুলোর উত্তর।

জানতাম না কোথায় পাঠাবো।

তাই আমার কাছেই রয়ে গেছে।

পরের স্টেশনে দেখা হবে।

স্যার, মেয়েটাকে পেলেন?

মিশন সফল হলো?

না।

আসল যুদ্ধ মাত্র শুরু হয়েছে, ভারাধি সাহেব।

স্যার!

আমার ট্রেন কি এখন বিপদমুক্ত?

আপনার ট্রেন আর আমাকে
এখন কেউ বাঁচাতে পারবে না।

হাহ?

টিকিট?

একি?

হায়দ্রাবাদের টিকিট কেটে,
মাদ্রাজের ট্রেনে বসে আছেন কেন?

এটা কী, ভাই?

- মাদ্রাজ?
- হাহ?

আপনার পেছনের চার বগি
ভূপালে মাদ্রাজ মেইলের সাথে জুড়ে যাবে।

প্রিয় সীতামহালক্ষ্মী!

আমি তোমার ভাগ্যনগরে...
না, না...

আমার সীতানগরে থাকতে যাচ্ছি,
এক মাস অবধি।

শুধু তোমার জন্যে।

চারমিনারের পাশের গলিতে
আমার এক বন্ধু থাকে, দুর্জয়।

অনেক বড় নাট্যকার।

ওকে খোঁজা একটু কঠিন।

কিন্তু খুঁজে বের করেছি।

কারন ওর বাড়িতে একটা টেলিফোন আছে।

নাম্বার ৩৭৬১২।

তোমার কলের অপেক্ষায় থাকবো।

তোমার,
রাম।

ভারতী!

শ্রুতি!

আমার শ্রুতিতে আপনি ভুল পেলেন?

সংগীতে আমার চারটা ডিগ্রী আছে।

থার্মোমিটারে আরো অনেক বেশি ডিগ্রী থাকে।

দুটোয় মিল কোত্থেকে আসলো?

এজন্যই বলে…

অহেতুক তর্কে আপনাকে হারানোর ক্ষমতা...

কার আছে?

কারো নেই।

প্রশংসা নয়, ভারতী!

আপনি এক অতুলনীয় রত্ন,
দুর্বোধ্যতা আর সরলতার মিশ্রণ।

তোষামুদি অনেক হয়েছে,
কবিতায় মন দেও।

রামের আগমণে উদগ্রীব বসে... হনুমান।

- কে?
- আমি রাম।

ভগবান শ্রী রাম!

রাম!

আপনি স্বয়ং এসেছেন আমার জন্যে?

আমার জীবন ধন্য হয়ে গেলো।

আমার জীবন...

বরবাদ হয়ে গেলো।

- হেই, আমায় আশা করোনি, তাই না?
- জানি না।

তোমায় চমকে দিতে
না বলেই চলে এসেছি।

বিপদ আর ঝঞ্ঝাট কখনো
বলে কয়ে আসে না।

হুট করেই আসে।

এবার কী সমস্যা এনেছ সাথে করে?

- টেলিফোনটা কোথায়?
- ঐখানে।

"জয়, শিব-সম্ভু।"

এই মোছামুছি কেন, রাম?

- হেই, দুর্জয়!
- হুম।

এক সপ্তাহ ধরে ফোনটা বন্ধ পড়ে আছে।

কবে ঠিক করাবি রে এটা?

ফোনতো কেবল একসপ্তাহ ধরে বন্ধ।

সরকারি দপ্তর ছয় সপ্তাহ
ধরে বন্ধ পড়ে আছে।

অভিযোগ দিয়ে এসেছি।

তোর রোজ রোজকার মিথ্যে
আর নিতে পারছি না।

বেচারি ঠাকুমা।

হেই! তুই জানিস, তুই আমায়
কত বড় ধোঁকা দিয়েছিস?

এখনো অবধি জানতাম না,
মিথ্যে বলা কোনো বড় ধোঁকা, সৈনিক।

সীতাকে আর দেখতে পারবো না।

আমি ওর ঠিকানা অবধি জানি না।

তুই আমার একমাত্র সুযোগ
নষ্ট করে দিয়েছিস।

সীতা?

হাই। আমি রামের বন্ধু, বিকাশ ভার্মা।

সীতা কে, ভার্মা?

সে এক লম্বা কাহিনী, দুর্জয় শর্মা।

সংক্ষেপে বলা যায় না?

ঠিক আছে।

বাড়িতে কেউ আছেন?

থাকবে না কেন?

কী ব্যাপার?

আপনার ফোন বন্ধ কেন?

আপনি সারাতে এসেছেন?

অভিযোগ দেওয়া ছাড়াই?

প্লিজ, আসুন।

গর্দভ ফোন।

ঠাকুমা দশদিন ধরে এরজন্য
ঘ্যান ঘ্যান করেই যাচ্ছে।

- আর সকাল থেকে তো...
- রামকে ডেকে দেবেন?

সীতা?

হুম।

সেকালে রাম সীতাকে খুঁজতে গিয়েছিল।

আর এখন সীতা রামের খোঁজে এসেছে।

একেই বলে কলিযুগ।

ডেকে দিচ্ছি দাঁড়াও।

প্রভু রাম?

কী হয়েছে?

সীতামাতা এসেছেন।

তুমি প্রথমবার আমার জীবনে এসেছো।

কী খাবে?

চিঠিতে লেখা কিছু শব্দের জন্য,

কাশ্মীরকে বরফে ছেড়ে,
কিভাবে ছুটে আসতে পারেন আপনি?

অজস্র চিঠিতে এই বর্ণনাই পেয়েছিলাম,
তুমি আমার জন্যেই জন্মেছো।

কাশ্মীরে তো চিঠির বৃষ্টি হচ্ছিল।

আমায় আসতেই হলো।

দুঃখিত, ম্যাম।

অনুমতি ছাড়াই আপনার
ছবি তুলে ফেলেছি।

এখানের ফোন নষ্ট।

আমি তোমার সাথে সাক্ষাতের
জন্য আক্ষেপই করছিলাম...

আর তুমি আমার সামনে এসে গেলে...
এক পরীর মতো।

জানো?

তোমার চিঠিগুলো আমার হৃদয়ে গাঁথা আছে।

আমি শতবার করে পড়েছি।

- যখন পড়ি মনে হয় যেন, আমাদের বিয়ের কত বছর হয়ে গেছে...
- কী?

মানে...

এমন মনে হয়, যেন আমরা দুজন
দুজনকে বহুদিন ধরে চিনি।

সেইভাবেই,

ওগুলোকে আজগুবি লেখা ভেবে নেও,
কারন আমি নিশ্চিত ছিলাম আমাদের কখনো দেখা হবে না।

আমি আসলে তোমাকে
এটা বলতেই এসেছিলাম।

মিথ্যে বলছো।

শুধু এ কথা বলার জন্য, তুমি
ঠিকানা খুঁজে এখানে কেন আসবে?

তুমি এসেছো আমার সাথে দেখা করতে।

স্বীকার করে নেও।

আমায় যেতে হবে।

সীতাজি! শুধু এক মিনিট।

এমনকি বৃষ্টিও তোমায়
যেতে মানা করছে।

আমার নাচের ক্লাসের
সময় হয়ে যাচ্ছে।

সীতাজি!

আমি একসময় তুষারে একা ভিজতাম।

আমায় এতোদূর এনে,
বৃষ্টিতে একা ভিজানো অন্যায়।

ভারী অন্যায়।

তোমার যাতায়াতের খরচ বলে দাও।

পাঠিয়ে দেবো।

প্রিয় সীতামহালক্ষ্মী!

এই বৃষ্টি তোমার খোঁজে এসেছিল,
আর আমি...

তোমার সাথে কিছুক্ষণের জন্যেও না ভিজে,
আমাদের দুজনকে ছেড়ে তোমার চলে যাওয়া দেখে,

এই বৃষ্টির মধ্যেও দমবন্ধ অনুভব করছি।

শুধু তুমিই এই আমার প্রাণকাড়া
দূরত্ব ঘোচাতে পারো।

একান্তই তোমার,
রাম।

ঠিকানাটা দিলে,
এই চিঠিটা পাঠিয়ে দিতে পারি।

বিপদকে ঠিকানা দিয়ে, ঘরে ডাকা,
বুদ্ধিমানের কাজ নয়, রামজি।

বিদায়।

একান্তই তোমার,
সীতামহালক্ষ্মী।

সীতার সাথে দেখা হওয়ায় ও এতোই খুশি ছিল,
যেন আকাশের চাঁদ হাতে পেয়ে গেছে।

রাম যার জীবনে কেউ ছিল না,
সীতা সেখানে তুফান হয়ে আসলো।

এক চিঠি...

কাশ্মীরের রাম আর নিজামের প্রাসাদে
কাজ করা সীতাকে মিলিয়ে দিল...

কী ভয়ানক প্রেমকাহিনী!

রামের সাথে আপনার আর দেখা হয়নি!

না।

বাড়ির অবস্থার কারনে আমি আর
আর্মি ফিরে যেতে পারিনি।

এরপরে রামকে পাঠানো কোনো
চিঠির জবাব আমি আর পাইনি।

আফরিন, তুমি ঠিক আছো?

না, স্যার।

সীতামহালক্ষ্মীর সাথে দেখা না করে,
আমার সমস্যার সমাধান হবে না।

রামের বন্ধু দুর্জয় শর্মা হয়তো
সীতার ব্যাপারে কিছু জানতে পারে।

আমার কাছে ওর ঠিকানা আছে।

দেখতে দাও।

স্যার, ইনি...?

বিষ্ণু শর্মা।

আমরা একই ব্যাটালিয়নে ছিলাম।

উনি কি সীতার ব্যাপারে জানবেন?

আমার তা মনে হয় না।

আমার কোনো উপায় নেই।

আমি চেষ্টা করে দেখবো।

ওনার নাম্বারটা হবে?

“বিষ্ণু স্যার।”

“বিষ্ণু স্যার।”

“না স্যার!”

“পাগল হয়েছো নাকি?”

“রাম, যেও না!”

“আমার কথা শুনুন, স্যার!”

ওহ!

সবাই এখানে?

আরামে দাঁড়াও, জেন্টেলম্যান।

আমিও তোমাদের মিস করবো।

ধন্যবাদ।
ধন্যবাদ।

হ্যালো!

হাই, আমি আফরিন।

ব্রিগেডিয়ার বিষ্ণু শর্মার
সাথে কথা বলতে চাই।

কিসের ব্যাপারে?

অনেক লম্বা কাহিনী, স্যার।

২০ বছর আগে ওনার সহযোদ্ধা, লেফটেন্যান্ট রামের
ব্যাপারে ওনার সাথে কথা ছিল।

স্যার!

আপনার কল এসেছে, স্যার।

কল? কার?

আফরিন নামের কারো।

সে ১৯৬৪ এ আপনার সাথে কাজ করা
কোনো লে. রামের ব্যাপারে কথা বলতে চায়।

রাম?

আমি নিয়ে আসছি, স্যার।

থামো!

হেই, থাম, ভাই।
আসছি, থাম।

কতক্ষণ?

বাস... বাস ছেড়ে দিচ্ছে।
জলদি চলো।

হ্যালো!

অজয়, ইন্টেলিজেন্স সার্ভিসের
সাথে যোগাযোগ করো, এক্ষুণি।

মেয়েটা কে ছিল?

কোথায় আছে?

কোত্থেকে এসেছে?

কার কার সাথে দেখা করেছে?

যত দ্রুত সম্ভব,
আমার সমস্ত তথ্য চাই।

এক্ষুণি।

স্যার।

কিছু পেলে?

স্যার, মেয়েটার নাম আফরিন।

হায়দ্রাবাদের আর্মি বেস থেকে
ও অনন্তপুরের অবসরপ্রাপ্ত...

সেকেন্ড লেফটেন্যান্ট
বিকাশ ভার্মার তথ্য নিয়েছে।

বিকাশ?

হ্যাঁ, স্যার!
বিকাশ, আপনার নাম্বার দিয়েছিলেন।

স্যার, আপনার ৭ টায়
দিল্লীর জন্য ফ্লাইট রয়েছে।

স্যার, কী হয়েছে?

- পরিকল্পনায় কোনো পরিবর্তন, স্যার?
- হ্যাঁ।

আমি অনন্তপুর যাচ্ছি।

বাবা!

বাবা!

আসো, পুত্র, ভীমসেনা।

কী হয়েছে?

কেউ এসেছে, বাবা...

এমন ভরদুপুরে...

নেমন্তন্ন বা অনুমতি ছাড়া...

আসতে দাও!

প্লিজ, ভেতরে আসুন।

আসুন।

পাকিস্তান সীমান্তে বন্দুকযুদ্ধ
থামাতে রাজি হয়েছে।

আশা করি, ওরা কথায় ঠিক থাকবে।

প্রভু রাম!

আপনার সহিত সীতাকে খোঁজার অধ্যায়
আমার জীবন থেকে পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে।

এবার আপনি প্রস্থান করলেই,
আমি পরিত্রাণ পাই।

আপনি সীতাকে খুঁজে পান,
এই প্রার্থণা করার ছাড়া,

আমি অন্যকোনো খাটুনির
কাজ একদমই করতে পারবো, প্রভু।

এই মাসে হায়দ্রাবাদে অস্টিনের
এক জাদুর শো আছে।

তুমি এখানে থাকলে,
আমায় সঙ্গ দিতে পারতে।

আপনার সমীপে,
এক সাধারণ অভাগা।

পেয়ে গেছি!

কাকে?

মনে পড়েছে।

কী?

- চল।
- কোথায়?

জাদু দেখতে।

এক সপ্তাহ ধরে সীতাকে খুঁজছি।

এখানেও ওকে খুঁজে না পেলে,

তোর চেষ্টা ছেড়ে দেওয়া উচিত।

- অবশ্যই ওকে খুঁজে পাবো।
- কোথায়?

এখানেই কোথাও আছে।

আমি কি এই সুন্দরী লেডিকে মঞ্চে
আসার অনুরোধ করতে পারি, প্লিজ?

যাও।

আপনার নাম, লেডি?

সীতামহালক্ষ্মী।

মিস. সীতা। আপনি বেশ জনপ্রিয় দেখছি!

আসুন, আসুন।
শো শুরু করা যাক।

রাম!

এদিকে।

- হাই।
- হাই!

স্যার। এক্সকিউজ মি।

শুধু এক মিনিট।

আপনি আমার নাম কী করে জানলেন?

তুমি শুধু ঐ চিঠিগুলোই পড়ো
যেগুলো পাঠানো হয়।

এমন অনেক আছে,
যেগুলো পাঠানো হয়নি।

অনাথ হয়ে আমার দিন
বেশ ভালোই কাটছিল।

সেই আমাকে শুধু চিঠি দিয়ে জ্বালাতনই করা হলো না,
বরং যাতায়াতের খরচও সাধা হলো।

এটা কি ঠিক?

হঠাৎ এমন তুফানের মতো এসে
উপস্থিত হলে, কেউ কী আর করবে?

এতটুকু ভাব না দেখালে,
তুমি তাকে গায়ে পড়া ভাববে না?

থামলেন কেন?

প্লিজ, বলুন।

কী বলবো?

গল্প।

চাঁদমামার গল্প।

মিস. সীতা, আপনি কি আপনার গোলাপটা
জারে রাখতে পারেন, প্লিজ?

অবশ্যই।

ধন্যবাদ।

অ্যাবরাকাডাবরা... অ্যাবরাকাডাবরা...

দর্শকদের থেকে কেউ মঞ্চে আসবেন, প্লিজ?

কাপড়টা সরান, প্লিজ?

অবশ্যই।

তুমি চিঠিতে তোমার জন্য
কিছু আনতে বলেছিলে।

প্রজাপতি।

দেখো এনেছি।

তোমার ব্যাপারে সত্যিটা জেনে গেছি।

কোন সত্যি?

অনুমান করছি, তুমি নাচের শিক্ষক?

মিস সীতা!

আপনার ফুল দিয়ে ভাববেন না।

আমি ওটা আপনার বাড়িতে পাঠিয়ে দেব।

আপনার ঠিকানাটা প্লিজ?

সীতামহালক্ষ্মী

নূরজাহান প্রাসাদ

আফজালগঞ্জ

হায়দ্রাবাদ!

আমরা চলে যাব আমাদের পরবর্তী জাদুতে।

হ্যালো! এক মিনিট।

দেখো।

হয়তো ঠিকানা জেনে গেছো বলে,
একবার দেখতে আসবে, ভাবছো।

সেই দুঃসাহস করো না।

সীতামহালক্ষ্মীজি!

এটা মোটেও ঠিক নয়।

- আমি এতো খাটলাম আর...
- এই যে...

আবার শুরু করলে!

কিন্তু...আমরা দেখা করবো কেন? হাহ?

আবার শুরু করি!

প্রিয় সীতামহালক্ষ্মী,

তোমার সাথে এভাবে আনুষ্ঠানিক হয়ে
কথা বলাটা বড্ড অস্বস্তিদায়ক।

- হেই, সীতা?
- হাহ!

এটা নয়তো শুধু হেই, তুমি...

এমন করে ডাকার মতো পরিচিত হতেও,
আমাদের ঘনঘন দেখা করতে হবে।

আমার ভাই জিজ্ঞেসা করলে,
কী বলবো?

ওনাকে সত্যিটা বলবে।

সত্যি বলবে যে
তুমি আমার সাথে আছো।

যদি তাকে সত্যিটা বলি,
সে মানবেই না।

তুমিও না বাড়াবাড়িই করো!

এরকম সুন্দর মেয়ে যখন মিথ্যে বলে,

সেটাও সত্যি হয়ে যায়।

সেটা তো বিশ্বাস করবে, তাই না?

“অপার সৌন্দর্য এই, স্বর্গতে মুখ ফিরিয়েই,
নেমেছে কি ভূলোকেরই নীলিমায়?"

"ওরা কি চাইলেই, এমনই অপরূপ এই তোমায়,
বাঁধতে পারতো কোনো শিল্পকলায়?"

"চমৎকারী তুমি,
যেমনটা দুনিয়া দেখেনি..."

"অপেক্ষা ধন্য মোর,
তোমারি হাসিরই ছোঁয়ায়।"

“তুমি কি কুয়াশা সেই,
যাতে রাত ঝুঁকে যায়?”

"তোমায় দেখে বিরক্ত চাঁদমামা বলে যে,
তুমি থাকতে তার কী কাজ?"

"শত-সহস্র তারার ভীড় আকাশে জানতে এই,
এমন দীপ্তি পেলে কোথায়?"

“তোমারই পরশে, ভূমি পৌঁছে স্বর্গতে,
অবাক তোমাতেই আমি।"

"আমায় নিয়ে ফেলে, না ফেরার পথে,
তোমার বলিষ্ঠ আকর্ষণই।"

"তোমার আঁচলের উড়া, এর সহজাত মুগ্ধতা।"

"নেমে রইলে, সুপ্ত বন্য কোনো সজীবতা।"

“পৃথিবী হার মানে মোর,
জানায় তোমায় কৃতজ্ঞতা।"

"তোমায় দেখে বিরক্ত চাঁদমামা বলে যে,
তুমি থাকতে তার কী কাজ?"

"শত-সহস্র তারার ভীড় আকাশে জানতে এই,
এমন দীপ্তি পেলে কোথায়?"

অ্যাহ!

রাতের বেলা এক ছেলে আর এক মেয়ে!

কী সময় এলো!

সর্বনেশে সময়।

- অন্তত দূরত্ব তো আছে।
- অ্যাহ...

যদি ঘনিষ্ঠ হয়ে থাকতো?

পৃথিবী থমকে যেতো না?

ওই! থামো!

আমি ছুঁলাম একে।

পৃথিবী কি থেমে গেছে?

ওকেই জিজ্ঞেস করো।

রামজি!

তোমার পৃথিবী কি থেমে গেছে?

নাহ।

যাও এখন।

তো, থামেনি।
চলো।

চলো, রাম।

"শাড়ি পড়া কোনো তোতা, চারিপাশে ঘুরে তোমার,
হয়েছিল কি প্রজাপতি?

"ধনুকে গুন দিয়ে, তোমার সাথে গাঁট বেঁধে,
হয়ে যাব সে রাম কি আবার?"

"সৌন্দর্য দাস কি কোনো, তোমার গৃহের?"

"পৃথিবী তোমার বিরুদ্ধে যুদ্ধের আয়োজনে।"

সীতাজি! তোমার জন্যে।

“পৃথিবী হার মানে মোর,
জানায় তোমায় কৃতজ্ঞতা।"

"তোমায় দেখে বিরক্ত চাঁদমামা বলে যে,
তুমি থাকতে তার কী কাজ?"

"শত-সহস্র তারার ভীড় আকাশে জানতে এই,
এমন দীপ্তি পেলে কোথায়?"

এই বৃষ্টি থামবে না।

ওখানে ভাড়ার জন্য ঘর আছে। চলো।

আসো, আসো।
ভিজে যাবে তো।

- ভাড়ার জন্য বোর্ড দেখলাম।
- ওহ ঐটা!

ঠাকুমা! ঘর দেখার জন্য লোক এসেছে।
আমি এক্ষুণি আসছি।

কী?

এই ভারী বৃষ্টিতে?

পরিবার নাকি?

আ...আহ...

আগামী সপ্তাহে...

আগামী সপ্তাহে আমাদের বিয়ে হতে যাচ্ছে।

হাহ?

তাই না?

তাই না?

- কী, মেয়ে?
- হাহ?

সত্যি?

হুম।

এই যে।
তুমি মাত্রই সম্মতি দিয়েছো।

ঠাকুমা! আপনি সাক্ষী।

কিসের?

মানে...আমি বলছিলাম, আপনি
আমাদের বিয়ের একজন সাক্ষী হবেন।

ঠিক না, সীতাজি?

তোমার সমস্যা কী?

এক সপ্তাহে বিয়ে হতে যাচ্ছে আর এতো
আড়ম্বরতা নিয়ে কথা বলছো ওর সাথে?

তোমার ওকে সীতা বা
ওগো বলে ডাকা উচিত।

ঠিক বলেছেন।

থামোতো, ঠাকুমা।

উনি সবসময় এমনই।

এসো, দিদি।

হেই! সীতা!

ডানের দরজাটা খোলো।

ঐখানে হল।

হ্যাঁ, দেখেছি।

অনেক সুন্দর।

দিদি!

- আপনাদের প্রেমের বিয়ে, তাই না?
- হ্যাঁ!

তুমি কিভাবে জানলে?

তোমরা বিয়ের আগেই
ঘর দেখতে এসেছো।

বুঝতে পারবো না?

আমি প্রেমিকদের ব্যাপারে শুধু পড়েছি।

এখনো অবধি দেখিনি, দিদি!

আপনাদের প্রথম দেখা কোথায় হয়েছিল?

ট্রেনে।

না।

কাশ্মীরে।

কাশ্মীর?

ওয়াও! কী চমৎকার জায়গা, দিদি!

চারিদিকে বরফে ঘেরা পর্বত,
আপেল, তুষারপাত...

লম্বা পাইন গাছ।

চারিদিকে কুরুক্ষেত্র।

মাজি, এখানে কী হচ্ছে?

পূজা!

আমরা বিশ্বাস করি,
বছরের প্রথম তুষারপাতের সময়,

শ্রীরাম আর সীতামাতা
আগার্তায় বেড়াতে আসেন।

সত্যিই?

আপনি কোথা থেকে এসেছেন?

হায়দ্রাবাদ থেকে!

আগুনে পোড়া আগার্তা রাম আর
সীতার আসার অপেক্ষা করছিল।

আমি কখনো ভাবিনি
সেদিন বেঁচে ফিরে আসবো।

তখনি, আমি রামকে দেখি।

হেই!

একটা মেয়ে এদিকে দৌড়ে এসেছে।

দেখেছো?

আমার সাথে আসুন।

কেউ আছে?
কেউ আছে এদিকে?

কেউ নেই।

তাহলে, এ কে?

আমার বিবি।

তোর বিবি অনেক সুন্দর।

আমরাও মুসলমান।

তাতে কী আসে যায়?

আমাদের তো শুধু ওর
সৌন্দর্য নিয়ে ভাবনা।

দুঃখিত, ম্যাডাম।

আপনাকে বাঁচানোর জন্য
নিজের স্ত্রী বলেছিলাম।

"কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে রাবণের নাশ...

আর যুদ্ধের দীপ্তেতে...
সীতার স্বয়ম্বর..."
[স্বয়ম্বর = পাত্রী নিজে পাত্র পছন্দ করা]

এখন বুঝতে পেরেছি, সীতা।

সীতা!

এতো অধরা!

এতো দেরি কেন?

কী করছিলি?

আমার প্রথম চুরির চেষ্টা।

তাই দেরি হয়ে গেল।

তো এটা...?

চমক।

কী হলো?
ঠান্ডা লাগছে?

বিপদ যখন কয়েক হাত দূরে থাকে,
তখন ঠান্ডা অনুভব হয় না।

ঘাবড়ে গেছিস।

ভয় কিসের? আমি আছি তো।

ঠিক এজন্যই আমি ভয়ে।

কাল আমরা প্রাসাদে যাচ্ছি।

কেন?
আমার শ্রাদ্ধের জন্য?

বিয়ের কথা পাকা করতে।

আমি এখন বিয়ে করতে চাই না।

আমি আমার বিয়ের কথা বলছিলাম।

তো, তুই এর মধ্যে আমায়
একা ছাড়ছিস না?

এমনকি রেডিও অবধি
আমায় নিয়ে মজা করছে।

একেই বলে নিয়তির খেল।

ও তোর সাথে যেভাবে দেখা করতে আসে,
প্রাসাদে যাওয়া তেমন সহজ হবে না।

আমাদের তেলেগু শিক্ষক কৃষ্ণমূর্তিজি
এখানেই কোথাও থাকতেন, তাই না?

তুই মাত্র যা বললি,
সেটা পুরো অপ্রাসঙ্গিক মনে হয় না?

কিছু গড়বড় হলে,
ওরা আমাদের মেরেই ফেলবে।

হেই!

আমরা এখানে ফুটবল খেলতাম।

তোর মনে আছে?

আশ্চর্য! মুঘল-এ-আজম
এখনো হলে চলছে!

আমি তোকে কী জিজ্ঞেস করছি?

আর তুই কী জবাব দিচ্ছিস?

আমরা প্রাসাদে কিভাবে ঢুকবো?

যদি তুই গাড়িটা থামাস।

দিলাম থামিয়ে।

প্রাসাদ চলে আসবে?

ঐখানে।

সুভ্রামানিয়াম।

উনি নিজে আমাদের ভেতরে নিয়ে যাবেন।

তো, তুই আগে থেকেই
পরিকল্পনা করে এসেছিস।

মনোবল আর সাহসিকতা
দেখালেই সীতামহালক্ষ্মীকে পাবো।

জয় হনুমান!

- এক রুপি...
- সুভ্রামানিয়ামজি!

সব ঠিক আছে?

কেমন আছেন আপনি?

আমার কী হবে?
ভালোই আছি।

তুমি কে?

আমি রাম।

গত শুক্রবার প্রাসাদে দেখা হলো?

শুক্রবার?

আমায় ভুলে গেছেন, স্যার।

আহ...সেরকম না।

এই এখন...

হালকা হালকা মনে পড়ছে।

- রাম!
- হ্যাঁ!

- কোথায় যাচ্ছেন? প্রাসাদে?
- অবশ্যই।

চলুন। আমিও প্রাসাদেই যাচ্ছি।

তোমায় কষ্ট দেওয়া কেন? আমি
দরাদরি করে এক রুপিতে চলে যাবো।

- তুমি যাও।
- ওহো! আসুন, স্যার।

আমার গাড়িতে চলুন।

তাই বলছো, রাম?

জি, চলুন, স্যার।

মুসলমানের প্রাসাদে, ভারতনাট্যম!

আইন বলে রাজার যা ভালো লাগে।

এখন আবার আইনের কথা কেন?

কথার কথা আরকি!

রাজকন্যার ভারতনাট্যম অনেক পছন্দ।

এজন্যই উনি শেখার জন্য একজন
শিক্ষিকাও নিয়োগ দিয়েছেন।

থামো, থামো!
কারা তোমরা?

- সিঁড়ি বেয়ে এদিকে আসছো কেন?
- স্যরি, স্যার।

- আমি ওকে মানা করেছিলাম, কিন্তু ও...
- স্যার! ও সুভ্রামানিয়ামজির ভাগ্নে।

তাই নাকি?

প্রণাম করো।

বাহ!

কী শিষ্টাচার!
কী সংষ্কার!

তোমার গায়ের রঙটা একটু কালো কিন্তু
দেখতে ঠিক তোমার মামার মতো৷

আমি সীতারামাইয়াহ,
তোমার মামার বন্ধু।

তাহলে আমায় আশীর্বাদ দিন।

ঠিক আছে, ঠিক আছে, ওঠো।

থামো!

থামো!

তুমি এখানে কী করছো?

কারো খোঁজ করছো?

আমি এখানে সীতার
জন্যে এসেছি, স্যার...

সীতা? কে সীতা...

সীতা...রামাইয়াহর জন্য।

ও সীতারামাইয়াহজির ভাগ্নে।

- হ্যাঁ।
- এবার তুই কর। নিচে আমি করেছিলাম।

তাই নাকি?

ওহ, ঠিক আছে। ঠিক আছে।

গর্দভটা আমায় কখনো বলেই নি,
যে ওর বিয়ের বয়সী একটা ভাগ্নে আছে।

- সে নিজেও জানে না।
- হাহ?

তুমি আমায় বলতে পারতে।

আমিও মাত্রই জানলাম, স্যার।

কিছু খেয়াল করেছেন?

আপনিও মাত্রই জানলেন।

জোক, স্যার।
জোক!

কী, সুব্বু!

এতোদিন ভাগ্নেটা ভালোই লুকানো ছিল।

ওহ, আসলেই!

এ রাম!

হেই, সরো!

- ভাগ্নে।
- জানি।

এই সীতারামাইয়াহ...

এদিকে, এদিকে,

মামা, তাই না?

হেই, তুই এই বয়সেও মজার
কাণ্ড করা বন্ধ করিস নি!

কেন করবো?

কেন?

আমার এই সম্পর্ক আর বড়দের
কথাবার্তায় দম বন্ধ হয়ে আসছে।

আমি গাড়িতে অপেক্ষা করছি, ঠিক আছে?

- আমি এটা সীতাকে দিয়েই ফিরে আসছি।
- ঠিক আছে, ঠিক আছে।

একটু হাসা থামা।

যাও গিয়ে সীতার কাছে নাচ শেখো।

তুমি এখানে কী করছো?

এখানে কেউ দেখে ফেললে বিপদ হবে।

এখন বুঝতে পারছি বিপদ
কতো সুন্দর হতে পারে, সীতা।

তোমার...এখানে আসা উচিত হয়নি।

শশশ...আমার মনে হয় তোমাদের
এখানে আসা উচিত হয়নি।

বলো, কেন এখানে আসার
মতো ঝুঁকি নিতে গেলে?

রাজকন্যাকে নাচ শেখানো
বেশ বড় চাকরিই বলতে হবে।

আমার কাছে একটা ছোট্ট
চাকরির প্রস্তাব আছে।

তোমার পছন্দ হলে,
যদি সেটা নিতে চাও...

কী চাকরি?

এতগুলো বছর ধরে আমার নিজের কোনো ঘর নেই,
বা এমন কেউ নেই যাকে আমি নিজের বলতে পারি, সীতা।

প্রতি ছুটিতে, ব্যাগ গুছিয়ে,

দেশ ঘুরে আবার আর্মি বেসে ফিরে যাই।

কিন্তু...এখন থেকে আর তেমনটা নয়।

যখনই ছুটি পাবো, আমি
তোমার কাছে ছুটে আসবো।

আমার জন্য অপেক্ষায় থাকা তোমাকে,
এভাবে কাছে টেনে নেব।

আমি কাশ্মীরে বলা সেই
মিথ্যেকে সত্যি করতে চাই।

জানি না এই চাকরিটা,
ছোট না বড়।

যদি তোমার পছন্দ হয়, আমায় জানাও।
তোমায় রানির মতো রাখবো।

সত্যিই।

তোমার সমস্যা আমায় বলো, সীতা!

আমি একজন সৈনিক।

হেই, ও কী করে এভাবে চলে যেতে পারে?

রামের মতো আর কাউকে পাবে?

ওকে বাঁচাতে নিজে জীবনের ঝুঁকি নিল,
এরপর তো কিছুটা কৃতজ্ঞতা থাকা উচিত ছিল।

বাদ দাও, তোমরা সব মেয়েরা একরকম।

আমাদের জেন্টেলম্যান বলে বেড়াও।

কিন্তু শেষমেশ কোনো বদমাশের
সাথে গিয়েই বিয়ে করো।

১৯৬৪ তেও এই হালই ছিল?

কোনো কারন তো ছিল?

থাকাই উচিত, তাই না?

বলে দিয়ে, চলে যেতো?

আমিও রামকে একই প্রশ্ন করেছিলাম।

কী বললো ও?

দুর্জয়।

দুর্জয়?

সামনে এসো।

লোকে কি খামোখাই বলে,
প্রেম অন্ধ হয়?

এরপর কখনো রামের সাথে
আপনার দেখা হয়নি?

- কাছে আসো।
- হেই, খারাপ হবে।

কেউ জানে না, ও কখন আসে, কখন যায়।

২০ বছরে ওর সাথে দেখা হয়নি।

ভীষণ বিরক্তিকর।

- আমরা জানি না সীতা কে?
- না।

- জানি না সে দেখতে কেমন?
- না।

আমার হাতে আর দশদিন বাকি।

সীতাকে খুঁজবো কিভাবে?

এক মিনিট।

রাম ওর একটা ছবি নিয়েছিল।

মনে হয়, ওটা আমার কাছে কোথাও আছে।

এ আমার মাসি।

এ আমার মা।

এ মঞ্চের ডাক্তার, দুর্যোধন।

- এই যে সীতা।
- হাহ!

ভয়ানক দেখতে!

কিন্তু বেশ সুন্দরী, তাই না?

ছবিটা আমি নিতে পারি? প্লিজ!

হুম।

ধন্যবাদ।

- তুমি কি অঙ্ক কষছো?
- না।

তো যাও।

ছবিটা দিয়ে কী করবে?

যদি এই ছবিটা সুভ্রামানিয়ামজিকে দেখাই, আর
নাচের শিক্ষিকা সীতার ব্যাপারে জিজ্ঞেস করি, উনি বলতে পারবেন।

চলো, চলো।

স্যরি, স্যরি।

- বালাজি।
- হাহ?

- বালাজি।
- কী হলো আবার?

কী হয়েছে?

সীতামহালক্ষ্মী কি... রাজকন্যা নূরজাহান?

তোমার সমস্যা আমায় বলো, সীতা!

আমি একজন সৈনিক।

অনুবাদ ও সম্পাদনায়ঃ
:.:.: তানভীর আহাম্মেদ লিওন :.:.:

জয় হিন্দ, স্যার।

চারদিন আগে এক মেয়ে
তোমার সাথে দেখা করতে এসেছিল।

নাম…

আফরিন, স্যার।

লন্ডন থেকে এসেছে।

পাকিস্তান থেকে।

ও পাকিস্তানি আর্মি মেজর
আবু তারিকের নাতনী।

ও বলেছিল ও একটা বই লিখছে আর
রামের ব্যাপারে জানতে চেয়েছে, স্যার।

আমি আসলেই দুঃখিত, স্যার।

আমি সত্যিই এসব জানতাম না।

তুমি জানতে না।

তুমি জানতে না ও কোথা থেকে এসেছে।

এটা কি অন্তত জানো
ও কোথায় থাকে?

ও আমায় একটা ঠিকানা দিয়েছে, স্যার।
রামের ব্যাপারে কিছু জানতে পারলে, জানানোর জন্য।

আমি এক্ষুণি গিয়ে নিয়ে আসছি।

এটা কিভাবে সম্ভব, ভাই?

নিজামের এক রাজকন্যা কাশ্মীরের
এক সৈনিককে চিঠি লেখে।

আর সে সেই চিঠি হাতে নিয়ে
এখানে এসে পৌঁছায়!

কী চমৎকার প্রেম কাহিনী!

আমি অবাক হচ্ছি রাজকন্যা কী করে
একজন সাধারণ সৈনিকের প্রেমে পড়লেন!

নূরজাহান এতোটাও সাদাসিধে ছিলেন না।

বিলেতফেরত ছিলেন।

যখন সে ওনাকে প্রস্তাব জানায়,
ওনি একদম চলে আসেন।

হ্যালো!

সবাই তোমার মতো নয়!

রামের মতো কাউকে পেলে,
কেউ না বলতে পারে না।

রাম আলাদা কী করে?

সেই তো এক ধনী মেয়ের প্রেমিক?
তাও আবার এক রাজকন্যার!

হেই!

রামের তো ধারণাই ছিল না
সীতা একজন রাজকন্যা।

ও কিভাবে না জানতে পারে?

এমনকি আমরা যাদের সাথে দেখা করেছি,
তারা কেউ জানতো না সীতা আর নূরজাহান একজনই।

শতভাগ সম্ভাবনা আছে।

হয়তো!

কিন্তু আমি এখানে রামের সমস্যার
সমাধান করতে আসিনি।

নিজের সমস্যার সমাধানে এসেছি।

যাওয়া যাক?

আমাকে স্বার্থপর ভেবো না।

ঠিক আছে?

আমরা ইতিমধ্যেই কিছু
অচেনাদের জন্য অনেক করছি।

তুমি বদলাবে না।

এতগুলো বছর ধরে আমার নিজের কোনো ঘর নেই,
বা এমন কেউ নেই যাকে আমি নিজের বলতে পারি, সীতা।

প্রতি ছুটিতে, ব্যাগ গুছিয়ে,
দেশ ঘুরে আবার আর্মি বেসে ফিরে যাই।

কিন্তু...এখন থেকে আর তেমনটা নয়।

যখনই ছুটি পাবো, আমি
তোমার কাছে ছুটে আসবো।

আমার জন্য অপেক্ষায় থাকা তোমাকে,
এভাবে কাছে টেনে নেব।

আমি কাশ্মীরে বলা সেই
মিথ্যেকে সত্যি করতে চাই।

জানি না এই চাকরিটা,
ছোট না বড়।

যদি তোমার পছন্দ হয়, আমায় জানাও।

তোমায় রানির মতো রাখবো।

সুপ্রভাত, মাননীয়া।

সুপ্রভাত।

আজকের কর্মপরিকল্পনা ব্যস্ত
হতে যাচ্ছে, ম্যাডাম প্রিন্সেস।

প্লিজ, দ্রুত তৈরি হয়ে নিন।

ম্যাডাম শিক্ষামন্ত্রীর সাথে
আপনার মিটিং একটায়।

মিস. রেখা আপনার সাথে থাকবেন।

এবং কল্যাণ সমিতির সাথেও আপনার
একটি মিটিং আছে, ম্যাডাম প্রিন্সেস।

হ্যালো!

কেমন আছো তোমরা?

সুপ্রভাত।

এরা মেয়েদের শিক্ষার
প্রোগ্রামের প্রথম উত্তীর্ণ ব্যাচ।

- আপনাকে অনেক ধন্যবাদ, ম্যাম।
- হুম।

তোমাকেও ধন্যবাদ, প্রিয়!

মাননীয়া!

আপনার সাধারণের সামনে
নিচু হতে নিষেধ আছে।

আমায় কে থামাবে, ফাতিমা?

ঠিক আছে।

হায় রাম!

তুই যদি তোর ব্যাপারে কিছু না জানিয়েই,
ওকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়ে বসিস...

ও পালাবে না কেন?

ও কী জানে না, আমার ব্যাপারে?

সব জানে।

তুই শুধু শত্রু খতম করতেই জানিস।

কিন্তু মেয়েদের মন সম্পর্কে
তোর জ্ঞান শূণ্য।

তুই রাম।

আর্মিতে কাজ করিস।

একে জানা মোটেই বলে না।

ও কি উৎসবের দিন আমায়
একটা শাড়ি কিনে দিতে পারবে?

মাসে কত কামায়?

সংক্ষেপে বললে ওকে বিয়ে
করলে আমার ভবিষ্যৎ কী হবে?

এরকম কিছু।

এটা ত্রেতাযুগ নয়, যে সীতা
সব ছেড়ে রামের পেছনে চলে গেল৷

ওহ!

আমার ব্যাংক অ্যাকাউন্টে
১২ হাজার রুপি আছে।

সামনের মাসে ১০০ রুপি
বেতনও বাড়বে।

প্রতি মাসে ৬০০ রুপি।

মাসে ৬০০ তো বেশ ভালো কামাই।

যা গিয়ে সীতাকে বল।

এটা বললে, ও খুশি হয়ে
সম্মতি দিয়ে দেবে।

তোর মতো বন্ধু পেয়ে তো
আমি ধন্য রে, রাবণ।

ধন্যবাদ। আমিও।

সীতামাতাকে বলিস, আমি
ওনার খবর নিয়েছি, রাম।

আপনি তো পুরো
রামায়ণই বদলে দিয়েছেন।

চলুন, যাওয়া যাক।

আসছি, যাও।

রাম আমায় বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছে।

একবার আমাদের বিয়ে হয়ে গেলে...

রানির মতো রাখবে বলেছে?

অবশ্যই রাখবে।

নূর!

এটা গাড়িতে বসে হেসেখেলে
আলোচনার মতো কিছু না।

বাস্তবে এসো।

যত দেরি করবে,
ও তত বেশি কষ্ট পাবে।

ওকে সত্যিটা বলে দাও।

যদি কখনো সত্যিটা বলতেই হয়,

তাহলে ওকে বলতে হবে যে,
আমি ওকে ভালোবাসি।

সীতা একটা কল্পনা।

তুমি রাজকন্যা নূরজাহান।
প্লিজ, জেগে উঠো।

আমি চাই না।

এমন কোনো মুহূর্ত নেই, যখন আমি চাই নি,
এই আমি যদি আমি না হতাম।

তুমি জানো সেটা কখনো হবে না।

এজন্যই ও প্রস্তাব দেওয়ামাত্রই
তুমি পালিয়ে এসেছো।

নূর! তোমার অপরাধবোধ হচ্ছে কেন?

তুমি তো প্রেরকের ঠিকানা অবধি লিখোনি।

তবুও, ও খোঁজতে খোঁজতে চলে এসেছে।

ভুল ওর।

আমি ওকে চিঠি লিখে ভুল করেছি।

ও অনাথ হয়েই বেশি সুখে থাকতো।

কোনো সমস্যা হয়েছে, মাননীয়া?

একটা বড় সমস্যা হয়েছে, মি. জাভেদ।

আপনি সমাধান দিতে পারবেন?

পারবেন না তো?

চলো।

নূর, তুমি আগুন নিয়ে খেলছো।

তুমি তোমার ভাইকে চেনো।

তোমার অন্য কোনো অপশন নেই।

তোমার বংশের ভবিষ্যৎ তোমার
সিদ্ধান্তের উপর নির্ভর করছে।

ভুলে গেছো?

হেই! সীতা!

মাননীয়া!

জরুরি তলব।

সবাই আপনার জন্য অপেক্ষা করছেন।

মহামান্য!

ওমানে বিদ্যমান আর্থিক সংকটের জন্য,

ওমানের সুলতান সকল কারখানায়
কবজা করে নিয়েছেন।

যাতে আমাদের সব নগদ অর্থ,
সম্পত্তি এবং জমিও রয়েছে।

বিষয়টা খারাপের দিকে যাচ্ছে।

ফারজানা!

কাঁদছো কেন? হুম?

ওমানের সুলতান আমাদের
কারখানাগুলোতে কবজা করে নিয়েছে।

আমরা রাতারাতি ৬০ কোটি রুপি হারিয়েছি।

কী?

এ থেকে উত্তরণের একটি উপায়ই আছে।

যদি ওমানের সুলতান তাতে রাজি হয়।

সুলতান আর তার পরিবারই
ওমানে একা সব ব্যবসা সামলায়।

তাই আমাদের করণীয় একটাই।

তাদের সাথে আত্মীয়তা করে নেওয়া।

যদি ওমানের সুলতানের কোনো মেয়ে থাকতো,
আমরা আপনার নাম দিয়ে প্রস্তাব পাঠাতাম।

কিন্তু ওনার শুধু একজন পুত্র আছেন।

ঠিকই ভাবছেন, স্যার।

যদি আমরা ওমানের রাজপুত্রের সাথে
আপনার বোনের বিয়ের প্রস্তাব পাঠাই,

আমরা বেঁচে যেতে পারি।

যদি ওমানের রাজপুত্র তাতে সায় দেয়।

মাননীয়া,

শুধু আপনিই এই অন্ধকারে,
একটু আলো দিতে পারেন।

প্রস্তাব পাঠাও।

ইনশাআল্লাহ।

আপ্পু! প্লিজ থামো।

শব্দ নয়।

কে?

সুভ্রামানিয়ামজি আপনার কাছে পাঠিয়েছিলেন।

আফরিন, ঠিক?

উনি বলেছেন আমায়।

আমি কলেজের জন্য বেরুচ্ছি।

একটা লেকচার আছে।

- যেতে যেতে কথা বলি?
- হুম।

তোমরা নূরজাহানের ব্যাপারে কী জানতে চাও?

এহ...আসলে ও একটা বই লিখছে।

ওহ!

এই চিঠিটা আমায় সীতার কাছে পৌঁছাতে হবে।

সীতা-রাম!

বিশ বছর হয়ে গেছে,
নামগুলো শোনার।

কী একটা দিন!

নূরজাহান কেন এক সাধারণ
সৈনিকের প্রেমে পড়লো?

তাও আবার এক হিন্দুর।

কিন্তু, কেন?

কারন, সে রাম।

স্যার! দাঁড়ান! থামুন।

আপনি ভেতরে যেতে পারেন না।

আমি অন্য কারো সাথে
দেখা করতে এসেছি।

স্যার, আপনি ভেতরে যেতে পারবেন না।

ভেতরে রাজকুমারী আছেন।

আপনার রাজকুমারীর সাথে
আমার কী কাজ?

আমিতো আমার রাজকুমারীর
সাথে দেখা করতে এসেছি।

প্রাসাদ থেকে বললো,
ও এখানে এসেছে।

- সীতা! সীতা!
- প্লিজ, চেঁচাবেন না।

বিশ্বনাথসাহেব! প্লিজ আমাদের একটু
ক্ষমা করুন আর রুমটা খালি করে দিন।

সীতা!

স্যার, সীতা নামে কেউ নেই।

স্যার, রাজকুমারী ভেতরে।
প্লিজ যেয়েন না।

রাম এখানে।

ওকে বলো সম্ভব নয়।
তুমি যেতে পারো না।

ওকে ওর জীবন কাটাতে দাও, নূর।
প্লিজ!

- আমি একবার গিয়ে ওর সাথে দেখা করবো।
- সিকিউরিটি!

- স্যারকে ছাড়ো।
- আমার কথা বলা দরকার, প্লিজ!

ম্যাডাম ডাকছেন আপনাকে।

আমি একটা বেকুব।

একজন মেয়ে কেন বিয়ের প্রস্তাব
দিতেই রাজি হয়ে যাবে?

যখন তুমি কালকে কিছু না বলে চলে গেলে,

আমার মনে হলো আমি কিছু ভুল করছি।

আমি তোমায় লিখে ভুল করেছি।

সেটা কিভাবে?

তুমি সহমর্মিতা থেকে লিখেছিলে,
কারণ আমি তোমায় বাঁচিয়েছিলাম।

আমিই শুধু একটু বেশি এগিয়ে প্রেম
আর বিয়ে অবধি কথা নিয়ে গিয়েছিলাম।

তাই না?

- বলো।
- না!

ভগবান! বাঁচলাম।

তো তুমি বিব্রত হওনি?

আমার ব্যাপারে না জেনে তুমি
কিভাবে হ্যাঁ বলতে পারো?

বিশেষকরে, তুমি সীতা।

সিঁদুর ছাড়াও তোমায় দেখতে
কত সুন্দর লাগে?

'মিসসাম্মা'-র ম্যাডাম সাবিত্রীর মতো।
[এক জনপ্রিয় সিনেমা আর তার নায়িকার রেফারেন্স।]

আর প্রেমে পড়লেও, মেয়েরা এই নিয়ে
চিন্তিত থাকে তাদের ভবিষ্যত কেমন হবে।

তোমায় চিন্তা করতে হবে না।

আমি তোমায় কথা দিচ্ছি।

আমার বেতন মাসে ৬০০ রুপি।

আমি পুরোটা তোমার হাতে এনে দেব।

আমার পি.এফ ৩০ রুপি।
[পি.এফ- মাসিক ভবিষ্যত তহবিল]

বার্ষিক আয়বৃদ্ধি ২০ রুপি।

বিশ্বাস করো আমার একাউন্টে
১২ হাজার রুপি জমা আছে।

আমরা সেটা দিয়ে একটা
বড় বাড়িও কিনতে পারি।

তুমি এখন যেমন আছো,
তোমায় ততটাই খুশি রাখব।

যদি আমি যুদ্ধে মারা যাই,
৪০ হাজার রুপি পর্যন্ত...

তুমি থামবে, রাম?

আমায় কেন এসব বলছো?

যদিও আমি ঐদিনের অপেক্ষায় আছি....

যেদিন আমি তোমায় আমার জবাব দেবো...

আমার বর্তমান জটিল পরিস্থিতি
আমায় সেটা করতে দেবে না।

আমায় বলছো না কেন,
তোমার সমস্যার ব্যাপারে?

আমি একজন সৈনিক।

তোমার সময় চাই, তাই তো?

যত সময় লাগে নেও।

তোমার সাথে এই ছোট্ট পথচলার জন্য,

আমি জীবনভর অপেক্ষা করবো।

কোথায় যাচ্ছো?

কাশ্মীরে?

কাশ্মীরে যেতে আরো চারদিন বাকি আছে।

এখনকার জন্য, আমি তোমাকে আমার না দেখা
কিছু পারিবারিক সদস্যদের সাথে দেখা করাতে চেয়েছিলাম।

কিন্তু তোমার একটু সময় চাই।

আর এখন ট্রেনের সময় হয়ে গেছে।

নূর! কোথায় যাচ্ছো?

রাম চারদিন পর কাশ্মীর ফিরে যাবে।

- আমি ওকে আর দেখতে পারবো না।
- হেই, কী বলছো তুমি?

সবাই তোমার জন্য ওখানে অপেক্ষা করছে।

আমার ওকে অন্তত সত্যিটা বলতে হবে।

- প্লিজ সামলে নেও।
- নূর!

“ও সীতা, রবো হয়ে পথে সঙ্গী তোমার।"

“রোজ রবো, ছায়া হয়ে দিন-রাতভর।”
- আরেকবার করি।
- কেন?
- কারন একবার হলে অমঙ্গল হয়।

“হাতের রেখাগুলো দেয় পথ জুড়ে।”

“ছাড়বো না কখনো, এই হাত তোমার।”

“নিয়তি বেঁধে দিয়েছে এই উপকূল,”
- ব্যথা করছে?

“জীবন সঙ্গী হবো আমি তোমার।”

“স্বপ্ন আমি যেন, যে ঐ চোখেতে
চমকের ঢেউ খেলে যায়।”

“হায় রাম, আমরা দুজন কি জন্য দুজনার?”

“কালের খাতে, ধাপে ধাপে পা ফেলার?”

“কাল কী হবে, তা লিখতে পারি কি আমরা?”

“হয়ে যাও লেখার কলম সেই!”

“জীবনটা আঁকতে পারি কি একসাথে?”

“তুলে দেও তুলি ছবি আঁকার।”

“বিদ্যুৎ থাকে লুকিয়ে আলোর পরেই,
সামলে, ও প্রিয়।”

“ও সীতা, রবো হয়ে পথে সঙ্গী তোমার।"

“হায় রাম, আমরা দুজন কি জন্য দুজনার?”

“নিদ্রায় জিজ্ঞেস করে দেখো আমায়,
তোমার নামটি ছাড়া কিছু নেই।”

“জানো তুমি পথচলা সারাজীবনের,
তাও গড়িমসির শেষ নেই।”

“এক মিষ্টি ব্যথা, যা আগে ছিল না কখনোই,”

“সময় এসে গেছে, হ্যাঁ বলে দিতে সবেতেই।”

“সময়, দয়ালু হ, নিস্তার দে,
যেভাবে স্বপ্ন আর ঘুম এনে দেয়,”

“আমায় রইতে দে, প্রাণপ্রিয় ভগবানের সাথে,
জাদুরই কোনো পরশে।”

“দীর্ঘা সুমাঙ্গালি ভবা!”

পিসি!

“দীর্ঘা সুমাঙ্গালি ভবা!” এর মানে কী?

স্বামী বাচ্চা নিয়ে চিরকাল সংসার করো।

ওহ, এই মানে!

শুনেছো?

রাধিকা কোথায় থাকে?

উপরের তলায়।

উপরের তলায়।

বোন রাধিকা!

তোমার ভাই, রামের তরফ থেকে চিঠি।

যে মিষ্টিটা তুমি পাঠিয়েছিলে, দারুণ ছিল।

আমার বোনঝি...

আমার বোনঝি কেমন আছে?

আমি আগামী মাসে ওয়ারাঙ্গাল
আসছি তোমায় দেখতে।

- তোমার মামা তোমায় দেখতে আসছে!
- রাধিকা!

শশশ! আস্তে!

আমার ছাড়া অন্য কারো
কন্ঠ শুনলে ও জেগে যায়।

তুমি কি আমার এখানে প্রথমবার এলে,
নাকি আগেও এসেছো?

যেহেতু নাম ধরে ডাকলে,
নিশ্চয়ই আগে এসেছো।

প্লিজ, অন্য কিছু ভেবো না,
আমার স্মৃতি একটু দুর্বল।

এতো ভালোবাসার কাজ নয়।

তার উপর লোক আঁধার হলেই আসে।

তাই না, সোনা?

কতক্ষণ থাকতে চাও?

আমি একটা চিঠি পেয়েছিলাম, যে
আমার একটা বোন আর বোনঝি আছে।

কিন্তু...

তুমি কখনো লিখোনি তুমি কেমন আছো?

ভাই!

তুমি সত্যিই এসেছো?

কেমন আছো, ভাই?

আমার বিশ্বাস হচ্ছে না।

এ কি আমার ভাবী?

অনেক সুন্দর।

এক মিনিট, ভাই।

ভাই।

তোমার বোনঝি, কাস্তুরী।

ওকে তোমার চিঠি
শুনিয়ে ঘুম পাড়িয়েছি, ভাই।

তুমি কি কাল অবধি থাকবে, ভাই?

চলো ওর কান ফুঁড়িয়ে আনি।

মানে... তুমি যদি চাও...

পতিত জীবন, ভাই,

কষ্ট পেও না।

আমার অভ্যাস হয়ে গেছে।

ওকে বড় করতে হবে।

এখানটা অন্ধকার।

কাস্তুরীর আলোতে বড় হওয়া উচিত।

আসো।

আসো!

- ঠিক আছে, বোন।
- কাস্তুরী!

রাধিকা! কোথায় যাচ্ছিস?

আমি নিয়ে যাচ্ছি ওকে।

সন্ধ্যার আগে ফিরে এসো।

বুঝেছো?

ভাই! ভাই, না, ছেড়ে দাও।

ও আর ফিরে আসবে না।

আমরা প্রতিদিন সংগ্রাম করে চলি।

আমাদের মুখের রুটি কেড়ে নিও না।

ওর জন্য অনেক টাকা দিয়েছি।

সবার জন্য কত?

রাম ওর সব টাকা খরচ করে আর
ওখানকার সবাইকে নতুন জীবন দেয়।

কাস্তুরীর খেয়াল রেখো।

ওর ব্যাপারে চিন্তা করো না।

ও এখন আমার দায়িত্ব।

নিজের খেয়াল রেখো।

রাম!

কী হয়েছে?

তোমার কি ভাড়া বাড়িতে সমস্যা হবে?

ভাড়া বাড়ি?

আমার অ্যাকাউন্টের সব
টাকা তো খরচ হয়ে গেল।

এখন ঘর কিভাবে কিনবো বলো?

কাল তুমি কাশ্মীর চলে যাবে?

হুম।

আবার কখন দেখবো তোমায়?

কাল রাত দশটায়ই।

আমার ট্রেন তখন।

তুমি আসবে, ঠিক?

আমি অপেক্ষা করবো।

সীতা রামকে বলতে চেয়েছিল ও
কখনো ওর সাথে থাকতে পারবে না।

তার বদলে, ও রামের এতো কাছে চলে
গিয়েছিল যে, দূরে সরে আসতে পারছিল না।

সেই সময়েই...

ওমানে তৈরি হওয়া তুফান
প্রাসাদে এসে পৌঁছালো।

হ্যাঁ। আমি দেখবো।

আমি পরে কথা বলছি।

হ্যালো, অ্যাম্বাসেডর।
স্বাগতম।

- সুপ্রভাত।
- সুপ্রভাত।

কোনো সুসংবাদ আছে, মি. আকবর?

এমনটা বলার জন্য দুঃখিত, মহামান্য।

কিন্তু আমাদের নির্দেশনা দেওয়া আছে এটা
সরাসরি রাজকন্যা নূরজাহানকে বলার।

ঠিক আছে, আসুন।

আশা করি সুখবর এসেছে,

তোমার ভাই, সারারাত ঘুমোতে পারেনি।

আমিও না।

দেখো তোমায়!

তোমায় উনি কী করে না করতে পারেন?

উনি নিশ্চয়ই রাজি হয়েছেন।

সেটাই আমার দুশ্চিন্তার কারন।

নূরজাহান!

ওমান এম্বাসেডর এসে গেছেন!

উনি তোমার সাথে দেখা করতে চান।

আসুন।

মি. আকবর...

রাজকন্যা নূরজাহান।

শুধু রাজপুত্রই নন, পুরো ওমান
আপনার প্রতীক্ষায়, মাননীয়া।

“কাকে সুধাই আমি, কী বইছে এই মনে?”

“জানি না কি, এর হবে না উত্তর?”

“এ হৃদয় গভীর জানে, তুমিই মোর জীবন।”

“মানি না, তুমি ফিরবে নাকো আর।”

“সময় কোনো উপকারে নেই,
প্রেমের এই ক্ষত সারাতেই।”

“এ তো ঠিক মোটেই নয়,
যে দূরত্ব ঘিরে রয়।”

“সেই মুহূর্তগুলো কি ভোলা যায়?”
- আমি অনেক খুশি।

আমরা রক্ষা পেয়েছি।

ওমানের রাজপুত্র প্রস্তাব গ্রহণ করেছেন।

অফিশিয়াল চিঠি পাঠিয়েছেন!

“দ্যুলোক-ভূলোকে সবার প্রিয়, তুমি রাম।”

“পাশে তোমার সীতা কোথায়?”

“দুঃসহ পীড়া দিচ্ছে কষ্ট এই তোমায়।”

“এ যদি হতো স্বপ্ন গাথায়!”
- স্যার! সীতামহালক্ষ্মী ম্যাডাম কেমন আছেন?

সৈনিক।

সাবধান!

সীতামহালক্ষ্মীর সাথে কথা বলতে পারি?

রাম! একটু পরে কথা বলি?

- স্যার, ওকে হয়তো এখানে পাওয়া যাবে না।
- স্যার!

যাওয়া যাক!

“অদৃশ্য শত্রুপানে...”

“...তলোয়ার কে চালাতে জানে,”

“এ যুদ্ধ কী করে সম্ভব?”

“তোমার কন্ঠে ডাকা 'রাম' এ,
হৃদয় ক্ষত-বিক্ষত,”

“কুঁড়ে খাচ্ছে আমায় এভাবনা,
আর ফিরবে না যে।”

“সেই মুহূর্তগুলো কি ভোলা যায়?”

সীতামহালক্ষ্মীই যে রাজকন্যা নূরজাহান,
রাম কি তা জানতো?

না।

নিয়তি, ওমানের আর্থিক সংকটের জন্য
রাম আর সীতাকে আলাদা হতে হলো!

কে বললো ওরা আলাদা হয়েছিল?

ওদের দেখা হয়েছিল?

কিভাবে?

প্রেম হয়তো অন্ধ।

কিন্তু আশেপাশের লোকেরা নয়।

সন্ন্যাসীরাও বাবু।

আপনি কখনো আমার বেতন
বাড়ানোর কথা ভেবেছেন?

কী?

বেতন, স্যার।

বেতন...

ও বেতনের কথা বলছিস...

আহ... কথা শেষ।

মার্থান্ডাম...

তুই জানিস তো খরচার কথা এলে,
আমি কানে একটু কম শুনি।

আমিও তাই ভেবেছিলাম।

কী খবর?

হুম।

এমন ছবি যেগুলো আপনার পত্রিকার কাটতি
আর আমার বেতন দুটোই বাড়াতে পারে।

এ কে?

রাজকন্যা নূরজাহান...

ওনার সাথে এই ছেলেটা কে?

এ কেউ না।

কেউ না?

শুধু একজন সাধারণ লোক!

রাজকন্যা নূরজাহান একজন
সাধারণের প্রেমে পড়েছে?

মার্থান্ডাম!
একে বলে খবর!

ছাপ এটা।

রাজকন্যা নূরজাহান একজন
সাধারণ লোকের প্রেমে!

ফালতু!

এটা মিথ্যে খবর!

আগামীকালের খবরেই
একটা লেখা ছাপা হবে....

রাজকন্যা নূরজাহানের বিয়ে হচ্ছে
ওমানের রাজপুত্রের সাথে।

আপনি বলতে চাচ্ছেন এটা সত্যি না?

অবশ্যই সত্যি না।

এটা কি আমরা রাজকন্যার
কাছ থেকে শুনতে পারি?

আমায় সুলতানকে বুঝাতে হবে।

অবশ্যই!

আসুন আমার সাথে।

নূর!

নূর...

খবরটা দেখেছো, নূর?

রাজকন্যা নূরজাহান একজন
সাধারণ লোকের প্রেমে!

হাহ?

নূর!

হেই!

খবরটা নিয়ে চিন্তা করো না, ঠিক আছে?

এটা মিথ্যে খবর।

আমি সামলে নেব। ঠিক আছে।
উনি তোমার কাছে সত্যিটা শুনতে চান।

ওনাকে সত্যিটা বলো, নূর।

বলো যে এটা মিথ্যে, নূর।

তুমি জানো, এই বিয়েটা কত গুরুত্বপূর্ণ।

একটা ছোট্ট ভুল, আর আমরা
সব হারিয়ে ফেলবো, নূর।

বলো এটা মিথ্যে, নূর।

প্লিজ!

আমি দুঃখিত, মি. আকবর।

এটাই সত্যি।

প্লিজ, আপনাদের রাজপুত্রকে জানাবেন,
আমি আন্তরিকভাবে ক্ষমাপ্রার্থী।

আমি একজন সাধারণের প্রেমে পড়েছি।

অবশ্যই, মাননীয়া।

আপনার অনুমতি নিয়ে...

আমি দুঃখিত।

আমার তোমাকে আগেই বলা উচিত ছিল।

তোমার কী মাথা ঠিক আছে?

ও ওমানের রাজপুত্র, নূরজাহান।

কে ঐ ছেলে?

কে ঐ সাধারণ ব্যক্তি?

নূর!

হ্যালো!

সীতামহালক্ষ্মীর সাথে কথা বলতে পারি?

রাম, বলো।

আমি মাত্রই ওদের তোমার ব্যাপারে বলছিলাম।

আর তুমি কল দিলে।

রাম?

রাম! একটু পরে কথা বলি?

কে এই, রাম?

লেফটেন্যান্ট রাম,
ভারতীয় আর্মি।

ভারতীয় আর্মি?

- তুমি কি পাগল হয়ে গেছো?
- হ্যাঁ, আমি পাগল।

নূর!

আমি দুঃখিত।

যদি রামের সাথে আমার বিয়ের কারনে,
তোমার শুধু আর্থিক ক্ষতিই হয়,

তুমি আমার পুরো সম্পত্তি নিয়ে নিতে পারো।

তুমি আসলেই পাগল হয়ে গেছো।

কী বলছো তুমি? হাহ?

আমি সম্পত্তির চিন্তা করছি না।

আমি তোমার চিন্তা করছি!

আর আমাদের পরিবারের সম্মানের!

নূর!

তুমি কি বুঝতে পারছো, তুমি কী
ছেড়ে দিচ্ছ আর কার জন্য?

যার জন্য আমি এসব করছি,
তুমি যদি তাকে জানতে,

আমায় এভাবে বলতে না।

- তুমি খুশি হতে...
- তুমি কী করে এমনটা করতে পারো, নূর?

যদি তোমার কোনো সমস্যা থাকে,
আমায় সীতা বলে ডাকতে পারো।

ফাতিমা, শ্রীনগর যাওয়ার ফ্লাইটটা
ধরার জরুরি আয়োজন করো।

আর ঐ সংবাদদাতাকে
ধন্যবাদ জানাতে ভুলো না।

উনি আমার অনেক বড় উপকার করেছেন।

প্যারেড! আরামে দাঁড়াও!

প্যারেড! সোজা হও!

স্যার!

কেউ এসেছে আপনার সাথে দেখা করতে।

আমি ওখানের চাকরি ছেড়ে দিয়েছি,

তোমার চাকরি করার জন্য।

আমি আর অনাথ নই, বলো?

“প্রত্যাশিত বিবাহ কী বলে?”

“স্বয়ম্বর বড়ই মনোহর।”

“প্রত্যাশিত দীপ্তি কেমন হবে?”

“প্রতি মুহূর্ত সৌন্দর্যে ভরা।”

“এ এক বাঁধন যা যাবে না ছেঁড়া,”

“এক গাথা যা শেষ হবে না পড়া”

“যুগে যুগেও রয়ে যাবেই,”

“সময়হীনা সংগীত এই সদাই,”

“প্রতি জোড়া সাক্ষী তারা,”

“প্রেমের রাজত্বে রয়েছে ভরা।”

“দুচোখ ভরা স্বপ্ন যেথায়,
অসামান্য এক শিল্প রূপে,"

“ছড়িয়ে যায় চারিপাশ।”

“দুচোখ ভরা স্বপ্ন যেথায়,
অসামান্য এক শিল্প রূপে,"

“ছড়িয়ে যায় চারিপাশ।”

“ছোট্ট এই আঙিনায়,
কেউ নেই আশেপাশ,”

“ঈর্ষায় কাতর সবাই,”

“কিন্তু মোদের তো নিজেদের চাই কিছু,”

“চারটে দিকতো রয়েছে পড়ে।”

“তাতে বিশাল দল হয়ে যাবে যে বড়ো?”

“হৃদয়ে সংগীতই যথেষ্ট নয়, বলো?”

“মোদের বিয়ের পৌরহিত্য করবে কে?”

“আমাদের এই হৃদয় জোড়াই।”

“হৃদয়? বড়ো।”

“দুচোখ ভরা স্বপ্ন যেথায়,
অসামান্য এক শিল্প রূপে,"

“ছড়িয়ে যায় চারিপাশ।”

“দুচোখ ভরা স্বপ্ন যেথায়,
অসামান্য এক শিল্প রূপে,"

“ছড়িয়ে যায় চারিপাশ।”

“কি বলো তুমি,
এই নয় কি সঠিক সময়?”

“হৃদয়ই সব জানে।”

“এরপরে বলো, আসে কী?”

“তা হবে তোমার কথাতেই।”

“এ কী অদ্ভুত বিধি-নিষেধ?”

“কারন এ মেয়ে মানে সংষ্কৃতিতে।”

“না বলা ঐ ঠোঁটগুলোর পেছনে,”

“বুঝে নেও, হৃদয়ের উচ্ছ্বলতা।”

“বেশ, ভারী।”

“দুচোখ ভরা স্বপ্ন যেথায়,
অসামান্য এক শিল্প রূপে,"

“ছড়িয়ে যায় চারিপাশ।”

সীতার মতোদের শুধু পুরাণেই খুঁজে পাওয়া যায়।

সত্যিকারের পৃথিবীতে না।

উনি একজন মহাকাব্যিক।

তর্কের কিছু নেই।

যদি সবকিছু ঠিকঠাকই হতো,
তোমরা আমার খোঁজে এখানে আসতে না।

আসল সমস্যা তখন শুরু হলো।

ম্যা'ম! কনফারেন্সের সময় হয়ে এসেছে।
ওনারা অপেক্ষা করছে।

হুম, আমি আসছি।

নূরজাহান এখন কোথায় জানেন?

লন্ডন।

হ্যালো, রাধিকা বলছি।

হ্যালো, আমি রাজকন্যা নূরজাহানের
সাথে কথা বলতে পারি?

আহ, উনি তো কাশ্মীর গিয়েছেন।

প্রতিবছরই এই সময়ের
দিকে উনি কাশ্মীর যান।

কাশ্মীর?

আহ...আমায় ওনার ঠিকানাটা দিতে পারবেন?

মেয়েটা আটটায় বেরিয়ে গেছে, স্যার।

আবু তারিক!

আফরিন হায়দ্রাবাদ ছেড়ে বেরিয়ে গেছে।

কোথায় গিয়েছে জানি না।

কাল আমি দিল্লী পৌঁছাতে পৌঁছাতে,

ওর হদিশ চাই।

স্যরি, স্যরি, স্যরি।

দেরি হয়ে গেল।

কিন্তু সীতাকে দেখার জন্য উৎসুক?

না?

- ধন্যবাদ!
- ধন্যবাদ।

- বালাজি!
- হুম।

ভয়ানক প্রেম কাহিনী, তাই না?

থামো।

- তুমি আরিফিন?
- জি, স্যার!

পাসপোর্ট, প্লিজ।

এক্সকিউজ মি, স্যার!

কী করছেন কী?

আমরা তোমায় কাস্টডিতে নিচ্ছি।

কিন্তু...কিন্তু কী কারনে, স্যার?

কোনো হট্টগোল করোনা।

আমাদের সাথে চলো।

আফরিন!

আফরিন!

হাই! থামো!

দাঁড়াও, দাঁড়াও, দাঁড়াও।
থামো! থামো!

আমি ওর সাথে,
আমায়ও নিয়ে চলো।

আমি কুকুরের মতো পড়ে রইলাম।

আর তুমি সেনাজিপে করে চলে গেলে!

পাকিস্তান থেকে এসে,
তুমি রামের ব্যাপারে কেন খোঁজ করছো?

তুমি কি রামকে চেনো?

বলো!

আমি জানি উনি ভারতীয়
আর্মিতে কাজ করেন।

ও একজন দেশদ্রোহী!
বিশ্বাসঘাতক!

ওর কারনে আমরা ৩২ জন সৈনিককে
হারিয়েছি, অপারেশন গ্রান্ডস্লামে।

কী হচ্ছে?
কথা বলো!

রামের ব্যাপারে তুমি কী জানো?

জয় হিন্দ, স্যার।

আরামে দাঁড়াও।

কী হচ্ছে এখানে?

স্যার, এ পাকিস্তান থেকে এসেছে।

এবং ভারতে লেফটেন্যান্ট
রামের খোঁজ করছে।

মেজর, আমি ওকে খুব ভালো করে চিনি।

ও কোনো গুপ্তচর নয়
আর আমাদের জন্য কোনো আশঙ্কাও নয়।

আমার ওর সাথে একা কথা বলা দরকার।

আমি পরে তোমায় বুঝিয়ে বলবো।
ধন্যবাদ।

স্যার! আমি বাইরে অপেক্ষা করছি।

আমার রামের সাথে কোনো লেনাদেনা নেই।

আমি জানতামও না ও একজন দেশদ্রোহী।

ও দেশদ্রোহী নয়!

আবার বলো না ঐ কথা।

কী হয়েছিল, তা আমার তোমায়
বলার প্রয়োজন নেই।

কিন্তু আমি রাম আর তোমার
দাদু আবু তারিকের কাছে ঋণী।

আপনি আমার দাদুকে কী করে চেনেন?

স্যার, প্লিজ অর্ডার করুন।

নিরামিষ জাতীয় কিছু আছে?

হেই, সাবধানে।

- এটা দাও!
- ঠিক আছে, স্যার!

বিষ্ণু স্যার!

রাম, ঠিক?

- হাই, স্যার।
- হাই, ম্যাডাম।

- হাই।
- আমি রাম।

- ও সীতা।
- হ্যালো।

আমি জানি।

তুমি শেষমেশ নিজের সীতাকে পেয়েই গেলে।

তুমি আসলেই একজন সৈনিক।

ম্যা'ম! ওদিকের টেবিলটা খালি।

ওকে, চলো।

এখানেই বসো।

অবশ্যই, ম্যা'ম।
বসো।

ম্যা'ম! আপনি কিভাবে
আমাদের ব্যাপার জানলেন?

বিষ্ণু স্যার বাড়িতে আমাদের
ব্যাপারে বলেছেন নাকি?

বিষ্ণু সহসা তারিফ করার বান্দা না,

কিন্তু তুমি ব্যতিক্রম।

ও তোমায় পছন্দ করে।

তোমার পরিবার কি বিয়েতে মত দিয়েছে?

না। তারা এর বিরুদ্ধে।

তাহলে না বলে পালিয়ে এসো
আর আমাদের মতো বিয়ে করে নেও।

- আপনাদের প্রেমের বিয়ে ছিল?
- হ্যাঁ!

ও আমায় গুরুদত্তের সিনেমা দেখাতে নিয়ে গিয়ে,
দুটো টিকিট দেখিয়ে বিয়ে করে নেয়।

আমায় বলে অবধি নি!

মা! আমাকে পর্যন্ত বলেনি!

আমরা আনসারির লোকেশন বের করার একটা উপায়
পেয়ে গেলাম, যেটা আমরা দীর্ঘদিন ধরে খুঁজছিলাম।

সেটার জন্য, রাম আর আমি
রসুলের সাথে একটা খেলা খেললাম।

ভালো পুলিশ...খারাপ পুলিশ খেলা।

হেই, তুই!

- আমার দিকে পিস্তল তোলার সাহস করিস!
- স্যার, স্যার!

- আমি তোকে মেরেই ফেলবো, হারামি।
- স্যার!

- বিষ্ণু স্যার! ছাড়ুন একে।
- রাম! ছাড় আমায়!

স্যার, আমায় মেরে ফেলবেন না, স্যার।

- ছাড়ো আমায়, রাম!
- স্যার, আমায় মেরে ফেলবেন না, স্যার।

- আমি তোকে খুন করবো।
- স্যার, প্লিক ছেড়ে দিন, স্যার।

প্লিজ ছেড়ে দিন স্যার।

- এটা ভারতীয় আর্মি, দেখ! কী ভেবেছিলি?
- স্যার, ছেড়ে দিন, স্যার। মাইরেন না।

- তোকে খুন করবো, গর্দভ!
- প্লিজ মাইরেন না, স্যার।

বিষ্ণু স্যার! প্লিজ সামলান নিজেকে!

আমি তোকে এক্ষুণি খুন করবো।

ভাই, ভাই, আমায় বাঁচাও।

ভাই, আমায় সাহায্য করো।

ও রামকে ভরসা করতে শুরু করে।

ভাই, আমায় সাহায্য করো!

আমরা সেটাই চেয়েছিলাম।

ওরা আমার চোখের সামনে
আব্বাসকে মেরে ফেলে।

আমি তখনই ওকে
খুন করতে চেয়েছিলাম।

শুধু আব্বাসই না।

এই ছবিতে যারা আছে সবাই,
এখানে আসবে আর মারা পড়বে।

কার জন্যে?

ওয়াহিদা।

এ ও কোনোদিন নিশ্চয়ই আসবে।

আর মারা পড়বে।

ও কেবল একটা বাচ্চা।

ওর হাতে সময় আছে।

তুমি যদি চাও তা না হোক,
আনসারিকে অবশ্যই মরতে হবে।

কিন্তু আমি জানি না ও কোথায় আছে।

জানলে আমায় বলো।

আমি কথা দিচ্ছি ওয়াহিদাকে নিরাপদে রাখবো।

ভারতের ইতিহাসে প্রথমবার,
তোমরা বর্ডার পেরিয়ে পাকিস্তানে ঢোকছো।

আনসারিকে মারার জন্য।

এই গোপন অপারেশন ওদের দেশে
ধ্বংসযজ্ঞ চালানোর জন্য নয়।

বরং আমাদের দেশে ধ্বংসযজ্ঞ ঠেকানোর জন্য।

আনসারির এই অপারেশনের ব্যাপারে, শুধুমাত্র
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শাস্ত্রী মহোদয়, রাষ্ট্রপতি এস. রাধাকৃষ্ণ মহোদয়....

আর্মি জেনারেল জি এইচ চৌধুরী
আর এই রুমে উপস্থিতরা জানেন।

যদি জীবিত ফিরে আসো, এই অপারেশনের
কথা ভুলে যাবে আর ভুলেই থাকবে।

কোনো মেডেল নেই, কোনো রেকর্ড নেই।

পরের দিন, স্বাভাবিক একটা দিন।

একমাত্র সমস্যা হলো, যদি তোমরা
নিরাপদে ফিরে না আসতে পারো।

ভারতীয়া আর্মি তোমাদের ভুলে যাবে।

আমরাও।

কোনো উপায় নেই।

তোমাদের ভারতে ফিরিয়ে আনা সম্ভব না।

কারন....

এই অপারেশন দুই দেশের
ইতিহাসেই অলিখিত থাকবে।

পাকিস্তানি মেজর আইয়ুব খান,

দুই বছর ধরে আমাদের
জেলে পড়ে আছে, সুখী আত্মা।

এমনকি ওজনও বেড়েছে।

কিন্তু তোমরা যদি তাদের হাতে ধরা পরো,
অবস্থা কেমন হবে, তোমরা নিজেরাই দেখে নেও।

কারন ওরা জেনেভা কনভেনশন
আইনের ধার ধারে না।

ওখানে বেঁচে থাকাটা কষ্টের।

মৃত্যু বরং আরামদায়ক।

এখনো কি তোমরা বর্ডার পেরিয়ে
আনসারিকে মারতে চাও?

জি, স্যার!

- তোমরা নিশ্চিত?
- জি, স্যার!

চিন্তা হচ্ছে?

হুম।

সীতার জন্য।

এতো কাছ থেকে পিস্তল
দেখে ঘাবড়ে যাওনি?

আমি একজন সৈনিককে
বিয়ে করতে যাচ্ছি।

রামকে কি বলেছো যে, তুমি সীতা নও,
রাজকন্যা নূরজাহান?

এখনো না।

আজ বলে দেব।

কিন্তু আমি কে তা গুরুত্বপূর্ণ নয়।

এটা গুরুত্বপূর্ণ যে রাম সত্যিটা জানুক।

জানি না ও কী করবে শুনে?

ও খুশিতে লাফিয়ে, নিজের চাকরি ছেড়ে,
তোমার সাথে চলে আসবে।

রেখা! ও রাম!

রাম এসে গেছে।

আমি পরে কথা বলছি।

তুমি ঘাবড়ে না গেলে,
আমার তোমায় কিছু বলার আছে।

কী হয়েছে?

ভয় পাচ্ছো?

তোমার ভয় করছে না?

তোমার সাথে দেখা হওয়ার আগে...

ভয় পেতাম না।

সবাইকেই তো একদিন
না একদিন মরতে হবে।

সবচেয়ে খারাপ ওরা কী-ই করতে পারে?

একটা গর্ত খুঁড়ে...

একটা গর্ত খুঁড়ে আমায় পুঁতে দেবে।

এমনটাই ভাবতাম, সীতা।

তখন আমার কেউ ছিল না।

তাই আমি কখনো দ্বিতীয়বার ভাবিনি।

আমার কিছু হয়ে গেলে,

আমি চাই তুমি আমায় ভুলে...

সতীদাহ অনেক আগেই নিষিদ্ধ হয়ে গেছে।

তুমি বলেছিলে তোমার কিছু বলার আছে?

আমি চাই তুমি নিরাপদে ফিরে আসো।

“তোর সাথেই পথ চলবো আমি,”

“রবো তোরই পাশে আমি।”

“যে গালে খেয়েছিলে চুমু,”

“এখনো আর্দ্র আছে কি?”

“শব্দগুলো বলার আগে,”
- রাম!

“পথচলা হয়ে গেছে শুরু।”

“ওহ, প্রেম...!
এ কি ছিল জরুরি...?”

“মায়ালোকই....
ঠিকানা তোমার...”

“আমার হৃদয় ভরিয়ে দেওয়া, প্রিয়া।”

“কী করে থামাই এর অনুশোচনা?”

“অন্তরীক্ষ, পেরিয়ে গেছে,”

“প্রেম এই যে আমার।”

“স্মৃতিগুলো, তোমার সাথে,”

“বরফের মতো না গলে যায়,”

“সুবাস সে যে তোমার,”

“ভরিয়ে দিয়েছে হৃদয় আমার।”
- রাম!

“এ কি ছিল জরুরি...?”

- তুমি এখানে কেন?
- এটা ভেজা!

এটা শুকানোর আগে,

তোমায় ফিরে আসতে হবে,

কথা দাও।

রাম!

দেরি হয়ে যাচ্ছে।

নিজের খেয়াল রেখো।

“একবার দেখবে না আমায়, প্রিয়তম?”

“একে বলো না বিচ্ছেদের উপমা।”

“ঠিক তোমারই, পায়ের নিচে,”

“জীবন আমার...চেয়ে দেখো।”

“দূরত্ব ঘুচে গেছে।”

“তোমারই উষ্ণ নিঃশ্বাসে।”

“ঘুম আমার ভাঙার আগেই,”

“ফিরে এসো, স্বপ্ন মোর।”

“ওহ, প্রেম...!
এ কি ছিল জরুরি...?”

“মায়ালোকই....
ঠিকানা তোমার...”

ও আমাদের লোক।

আব্দুল!

আগে কাপড় বদলে নেও।

এরপরে কী করতে হবে, বলছি।

কে?

ফারুক ভাই রসদ পাঠিয়েছেন।

ঠিক আছে। ভেতরে রাখো।

- ওহ, সেলিম!
- হ্যাঁ, ভাই।

- জনাব তোমাদের দুজনকে উপরে ডাকছেন।
- ঠিক আছে, ভাই।

আনসারি বোধহয় উপরে আছে।

ওখান থেকেই ওকে উপরে পাঠানো যাক।

কাশ্মীর যদি মুসলমানদের দখলে আনতে হয়,

শুধু একটা কাজই করতে হবে।

ভারতীয়দের প্রতিটা সেনাকে
ধরো, আর খুন করো।

ঐ সৈনিকদের মৃত্যুচিৎকার,

কাশ্মীরের পাহাড়ে প্রতিধ্বনিত হওয়া চাই।

হুম? রুদ্রাক্ষ?

হেই, কে তুই?

ভাই! হিন্দুস্তান...

জেগে উঠো!

নিজেদের নম্রতাকে ঝেড়ে ফেলো।
বেরিয়ে আসো!

অস্ত্র তুলে নেও।

কাশ্মীর জয় করো।

সেনারা! চলো!

আল্লাহর রহমত আছে তোমাদের উপর।

মুসলিম নয় এমন যে কেউ,
তোমার শত্রু।

এই জিহাদের আজকেই
আরম্ভ করা যাক।

কাশ্মীর নিয়ে ফিরে আসো।

আমরা সেটা আল্লাহর নিকট কুরবানি দেব।
পাকিস্তান...

পাকিস্তান তোমাদের পক্ষে।

পরের জন্মে অন্তত,

এটা ভালো করে বুঝার চেষ্টা করিস।

বীর মাদ্রাজিদের,

জয়, জয়!

জয়!

জয়!

জয়!

ভাইয়া...

ভাইয়া...

রাম! দ্রুত চলো।

ওয়াহিদা...

পাগল হয়ে গেছো?

রাম! যেও না।

এরা দুজন বাদে সবাই মৃত।

হেই! তোদের সবাইকে মারতে
আমরা দুজন, যথেষ্ট নই?

জানি না, আমাদের কতদিন
বন্দি করে রেখেছিল।

মাইনাস তাপমাত্রা।

মেজর ঠিক বলেছিলেন।

ওদের অত্যাচার সহ্য করে,
বেঁচে থাকা কঠিন।

মৃত্যু বরং আরামদায়ক।

গোল!

সৈনিকরা! থামাও এই খেলা।

কী এইসব?

আমি আমার সৈনিকদের ব্যবহারে দুঃখিত।

যদি তোমরা ঐ মেয়েকে না বাঁচাতে,

নিজ দেশে বীর হয়ে যেতে।

তোমার হৃদয়ের মানবতা শুধু
আমার কাছেই দৃশ্যমান নয়....

সৃষ্টিকর্তার কাছেও দৃশ্যমান।

স্যার, কাপড়।

প্লিজ, এগুলো পড়ে নাও।

হেই! আমরা তোমাদের পোশাক কেন পড়বো?

শুধু এই পোশাক পড়লেই,
তোমরা পাকিস্তানি হয়ে যাবে না।

এগুলো পড়ো,
নয়তো ঠান্ডায় মরে যাবে।

কী? আমাদের ভয় দেখাতে চাইছেন?

নোংরা বদমায়েশের দল!

আমি খুন করবো তোদের।

- আর্মি ক্যাম্পে নয়।
- রাম কোথায়?

ও বলেছিল, এক সপ্তাহে ফিরে আসবে।

এক মাস হয়ে গেল।
কোথায় ও?

- ওর কী হয়েছে? আমার জানার অধিকার আছে।
- শান্ত হও, সীতা।

ওর সাথে আসলে কী হয়েছে?

কেমন আছে ও?

- আমি ওর জন্য চিন্তিত।
- প্লিজ শোনো আমার কথা।

তদন্ত চলছে।

আমরা কিছু জানতে পারলে,
তোমায় জানাবো

মিথ্যে।

আপনি কিছু লুকাচ্ছেন...
কিছু লুকাচ্ছেন আপনি।

ও বলেছিল,
ও কোনো গোপন মিশনে যাচ্ছে।

কিসের গোপন মিশন?

আমি এখানকার কমান্ডিং অফিসার!

- আপনি লুকাচ্ছেন কিছু। এটা মিথ্যে।
- কী বলছো তুমি?

কী নোটিশ এটা?

ওরা এটা দিয়ে বললো বিষ্ণু নিখোঁজ।

আপনার এর জবাব দিতে হবে।

কোথায় ও?

কেমন আছে?

আমি জানি না।

ওরা দুজন ব্যারাক ছেড়ে গেছে
চার সপ্তাহ হলো।

আমি বিশ্বাস করি না।

- কী বলছেন আপনি?
- আপনি কিছু লুকাচ্ছেন।

আর আমাদের মাঝে এই
কথাবার্তা হওয়াই উচিত নয়।

আপনারা ভেবেছেন, রামের ব্যাপারে একটা
নোটিশ পাঠানোর জন্যেও, ওর কেউ নেই?

ওর জন্য আমি আছি।

আমার মেয়েটার দিকে তাকান।
দয়া হয় না আপনার?

কোথায় ও?

সত্যিটা বলুন আমাদের।

ওরা বলবে না।

ওরা আমাদের সত্যিটা বলবে না।

আমি সত্যিটা বের করতে পারবো।

চলুন।

রাম, স্যার।

উনি আমাদের দেশের জন্য
অনেক করেছেন, স্যার।

এটা ঠিক নয়, স্যার।

স্যরি, স্যার।

নির্মম সত্যিটা হলো...
আর এক সপ্তাহের মধ্যে,

আমরা ওদের পলাতক ঘোষণা করবো।

আপনি সবাইকে এটা বিশ্বাস করাবেন যে,
তারা আর্মিকে বিশ্বাসঘাতকতা করে, পালিয়ে গেছে?

- কেন এমনটা করছেন, স্যার?
- উপায় নেই।

আমরা উর্দিধারী, স্যার।

এটা করতেই হবে।

স্যরি স্যার,
আপনার অনুমতি নিয়ে....

হেই, রাম! আমরা এটা অবধি
জানি না, কতদিন ধরে এখানে আছি।

হেই, চুপ কর।

সব তোর জন্য।

তোর তো কেউ নেই, শালা অনাথ!

আমার একটা পরিবার আছে।
রাম!

তোমাদের দেশে তোমরা
দুজনই পলাতক সৈনিক।

যারা ভারতীয় সেনানিয়ম
ভেঙে পালিয়ে গেছে।

স্বীকৃতিবিহীন আত্মত্যাগ।

তোর জন্য তো শুধু সীতা আছে।

কিন্তু আমার জন্যে?
একটা পুরো পরিবার বসে আছে।

স্যার, রাম কোথায়?

রাজকন্যা নূরজাহান!

আসুন, আসুন, আসুন।
প্লিজ বসুন।

এক ঘন্টার ব্যবধানে রাষ্ট্রপতি
আর প্রধানমন্ত্রীর কল।

যে রাজকন্যা নূরজাহান আসছে।
যা জরুরি করো।

আমায় তোমায় সে সত্যি বলতে হবে,
যা কাউকে বলিনি।

কারন তুমি এদেশের সবচেয়ে ধনী
আর প্রভাবশালী লেডি।

আমি চাইলেই তোমাকে সত্যিটা না
বলতে পারি, আর তুমি সেটা জানো।

স্যার!

আমি কোনো রাজকন্যা নই।

আমি সীতামহালক্ষ্মী।

লেফটেন্যান্ট রামের স্ত্রী।

আমায় সত্যিটা বলুন যে,
ও নিরাপদে আছে।

বিজয় উপভোগ করতে না পারার কষ্ট।

হার না মানার দায়িত্ববোধ।

ওরা আনসারি এবং আরো ৩৫
মুজাহিদিনদের শেষ করেছে।

কিন্তু, দুর্ভাগ্যবশত ও পাকিস্তানি
আর্মির হাতে ধরা পড়ে।

কারাগারে?

ও কারাগারে আছে?

হ্যাঁ!

[এই গানটির ইসাব নেই বিধায়
অনুবাদ সম্ভব হয়নি।]

রাম পাকিস্তানের কারাগারে আছে।

আমি জানি তুমি পাকিস্তানের
অনেক প্রশাসনিক ব্যক্তিদের চেনো।

আমি রামকে বিয়ে করবো না।

তুমি যা বলবে তাই করবো।

আঘাত ইতিমধ্যে লেগে গেছে।

এখন আমার কিছুই করার নেই।

আমি রামকে বিয়ে করবো না!

প্লিজ! কোনোভাবে ওকে ফিরিয়ে আনো।

- সালাম, স্যার।
- যেতে পারো।

আহ, তারিক!

- কিছু নিয়ে আলোচনা করতে চাইছিলে?
- হ্যাঁ, স্যার।

কর্ণেল আব্বাসকে ভারত থেকে ছাড়িয়ে
আনতে, একটা দারুণ প্লান রয়েছে।

কিন্তু একমাত্র আপনিই সেটা করতে পারেন।

আমি? কিভাবে?

স্যার, আপনি তো জানেনই।

আমাদের কাস্টডিতে দুজন
ভারতীয় সৈনিক আছে।

ওদের দিয়ে বদলা বদলি করা যাক।

আল্লাহ কসম, আপনার
কদর অনেক উঁচু হয়ে যাবে।

ওরা হারামী ভারতীয়।

ওরা সৈনিকদের সম্মান দেয় না।

স্যার!

ভারতীয় এম্বাসি থেকে
কেউ দেখা করতে এসেছে।

- হ্যালো!
- হ্যালো!

আমি রাহুল ভার্মা।

আপনার জন্য কী করতে পারি?

আমাদের কাছে আপেলের ভালো মজুদ আছে।

সুস্থ এবং চমৎকার অবস্থায়।

আমরা জানি, যে আপনার কাছে
দুটো মূল্যবান আম আছে।

আমাদের ওদের নিয়ে আগ্রহ।

হ্যাঁ, আছে।

কিন্তু কিছুটা খারাপ অবস্থায়।

কিছুদিনে, নাই হয়ে যাবে।

পঁচে যাবে শীঘ্রই।

ভারতে আমের অনেক চাহিদা।

আর আপনাদের তো আপেলই পছন্দ।

বিনিময় করছি না কেন?

অদল-বদল?

আপনি কাশ্মীরের আপেলের কথা বলছেন।

আমরা তো পুরো কাশ্মীরই বাগিয়ে নিতে প্রস্তুত।

মজা করছিলাম।

আপনার প্রস্তাব পছন্দ হয়েছে।

শীঘ্রই দেখা হবে।

মি. রাহুল বলামাত্রই আপনি চলে
আসার জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ।

প্লিজ, এমনটা বলবেন না, মি. তারিক।

আমার আপনাকে ধন্যবাদ বলা উচিত,
আপনার সাহায্যের জন্য।

- আশা করি এটা সফল হবে।
- হবে।

উনি কখনো নিজের ওয়াদা ভাঙেন না।

উনি রাষ্ট্রপতি আইয়ুব খানের
সাথে দেখা করতে যাবেন।।

যদি সৃষ্টিকর্তা সহায় হয়....

জয়, শ্রীরাম।

চলো, চলো।

আদাব, জনাব।

আপনাকে বিরক্ত করার জন্য দুঃখিত স্যার।

তোমরা দুজন ভারত ফিরে যাচ্ছো।

কী?

ওরা আমাদের ছেড়ে দেবে?

হ্যাঁ।

আসলেই?

সৃষ্টিকর্তার কৃপায়।

স্যরি, তারিক।

আমি আপনার সাথে অনেক
খারাপ ব্যবহার করেছি।

প্লিজ, সেগুলো মনে নিয়েন না, তারিক।

- প্লিজ!
- স্যার, আপনার জন্য কল।

আমি আসছি।

- তোমাদের ব্যাপারেই।
- ঠিক আছে, স্যার।

সুখবর নিয়ে ফিরে আসছি।

স্যার!

স্যার, আমরা ভারতে ফিরে যাচ্ছি, স্যার।

হেই, হেই!

হতাশায় ভুগে,
আমি তোকে অনাথ বলেছি।

ধুর! আমার নিজের উপর ঘেন্না হচ্ছে।

স্যার!

শান্ত হোন, স্যার!

স্যরি, ভাই।

আমরা ভারতে যাচ্ছি।

আসসালামু আলাইকুম, জনাব।
তারিক বলছি।

- জেনারেল ওকে বলেছে।
- ইয়েস!

ধন্যবাদ।
অনেক ধন্যবাদ, স্যার।

- কিন্তু দুজনের জন্য না।
- কী?

- কেবল একজনই যাবে।
- কী?

আমি বুঝলাম না।

আপনি বলেছিলেন দুজনকেই ছেড়ে দেবেন!

আমি এসে তোমার সাথে কথা বলবো।

- স্যার, স্যার, প্লিজ শুনুন আমার কথা।
- আমি বলেছি, আমি এসে তোমার সাথে কথা বলছি।

হেই, তারিক!
কী বললেন ওনারা?

কখন ছাড়ছেন আমাদের?

দুজনকে না।

কেবল একজনকে।

কী বললে?

তুমি বলেছিলে, দুজনকেই ছাড়বে।

এটা কি কোনো খেলা হচ্ছে? হাহ?

বিষ্ণু স্যার!

স্যরি, স্যার।

তাহলে আমাদের মধ্যে কে?

আমি নাকি ও?

হেই, তারিক!

প্লিজ, আমি যা বলেছি সেটা মনে রেখে,
আমায় এখানে আটকে রাখবেন না।

দরকার হলে,
আমি আপনার পায়ে পড়ছি।

- আমার পরিবারের জন্যে হলেও আমায় ফেরত পাঠান।
- বিষ্ণু!

- প্লিজ, তারিক। আমি অনুরোধ করছি।
- এসব কী?

নিজেকে ধরে রাখো।

আমি বুঝতে পেরেছি, রাম।

আমি জানি, কেবল তুইই ছাড়া পাবি।

তুই ওনার সাথে পরামর্শ করে
আমায় ধোঁকা দিয়েছিস।

আমায় এখানে ময়লায় মতো
ফেলে রেখে, তুই চলে যাবি, ঠিক?

শালা অনাথ!

পাগল হয়েছেন নাকি?

আমাদের মধ্যে যদি কেউ যায়,
সেটা আপনিই হবেন।

আমি না।

ঠিক আছে?

আর একটা কথা,

আমার জন্যে কেউ আছে,
যে আমৃত্যু আমার অপেক্ষা করবে।

আমি কোনো অনাথ নই, স্যার।

আমি আজ অবধি ওর
সেই চাহনী ভুলতে পারিনি।

বিশ বছর ধরে,

আমি জীবিত লাশ হয়ে বেঁচে আছি।

ঐদিন আমি শুধু
বের হতে চাইছিলাম।

এই ভাবনা আঘাতই
করেনি যে, ও রয়ে যাচ্ছে।

রাম কি এখনো পাকিস্তানি কারাগারে?

সেই বছরই...

তোমাদের পাকিস্তানি আর্মি...

১২ টি ভারতীয় আর্মি বেসের
লোকেশন জানতে পারে।

একদম সরাসরি বিমান হামলা চালায়।

৩২ জন সেনা মারা যায়।

তারপর,

আমাদের ইন্টেলিজেন্স সোর্সের
মাধ্যমে জানা যায়...

রামই কো-অর্ডিনেট ফাঁস করেছিল।
[কো-অর্ডিনেট = ম্যাপে কোনো জায়গার অবস্থান]

আমি নিশ্চিত ও এমনটা করবে না।

রাম যে দুনিয়ায় ছিল, সেটা তাকে
শত্রু হিসেবে দেখা শুরু করলো।

আমি জানি না ও আসলেই
এটা করেছে কিনা?

কিন্তু সীতা এর ভার বয়েছে।

কী বলেছিলে তুমি?

রামের সাথে তোমার কোনো লেনাদেনা নেই?

ও গত বিশ বছর ধরে
পাকিস্তানের কারাগারে রয়েছে....

আর আমি এই নরকযন্ত্রণায়...

শুধুমাত্র একটা কারনে।

ঐদিন যে এক মেয়ের
কান্না ও শুনেছিল, তার জন্য।

জানো ঐ মেয়েটা কে?

তুমি।

কী?

আপনি মজা করছেন?

ও যদি সেদিন তোমার কান্না না শুনতো,

এখন সীতার সাথে
সুখে জীবন কাটাতো।

আর আমি শান্তিতে থাকতে পারতাম।

ওয়াহিদা...

ওয়াহিদা।

কিন্তু, এটা অসম্ভব।

এটা তো আমার ছোটবেলার নাম।

আপনি কিভাবে জানলেন?

না!

লে. রাম আমায় একটা দায়িত্ব দিয়ে ভরসা করেছিলেন।
তোমায় অবশ্যই এই চিঠিটা সীতামহালক্ষ্মীর কাছে পৌঁছাতে হবে।

একটা ঋণ যা তোমায় শোধ করতে হবে, আফরিন।

উনি আমায় পিয়নের কাজ দিয়ে গেছেন?

একজন পাকিস্তানি সৈনিক কেন
ভারতীয় সৈনিকের সাথে বন্ধুত্ব করতে যাবে?

অর্থহীন!

স্যার, আপনাকে দ্রুত বের হতে হবে।

নয়তো ফ্লাইট মিস করে যাবেন।

কাল আপনায় দিল্লীতে দায়িত্ব নিতে হবে।

আমি দুই মিনিটে আসছি।
তুমি যাও, অপেক্ষা করো।

তুমি রামের রক্ষা করা একটি জীবন।

আমি এখানে তোমার
কোনো বিপদ হতে দেব না।

আমি তোমায় পাকিস্তানে
ফেরত পাঠানোর দায়িত্ব নেব।

রামের চিঠিটা কোথায়?

আমি দেখবো যাতে
সীতার কাছে পৌঁছে যায়।

বালাজির কাছে ওটা।

এতক্ষণে হয়তো,
সীতাকে দিয়ে দিয়েছে।

সীতা কাশ্মীরে?

ও এখানে কী করছে?

“সেদিনের সেই মধুর স্মৃতিগুলি,
সরে না দুচোখ হতে কোনোকালে।”

“জন্মান্তর ধরে, চেয়ে বসে রই,
সেই অফুরন্ত দীর্ঘ সময়ের দেখায়।”

“বায়ু-ধূলি, আনে পরিমল তোমার,
রোজ দেখি তোমায় নতুন করে।”

হ্যালো!
নূরজাহানের ঠিকানা জানেন?

নূরজাহান?
নাহ।

নূরজাহানের ঠিকানা জানেন?

- না, ভাই!
- জানি না।

সীতামহালক্ষ্মী কোথায় থাকে কে জানে?

সীতামহালক্ষ্মীজি
ঐ পাহাড়ের চূড়ায় থাকেন।

- ঐ পাহাড়ের চূড়ায়?
- হ্যাঁ!

সীতামহালক্ষ্মীজি!

রামের চিঠি আপনার জন্য।

রাম?

এটা ২০ বছর ধরে অপেক্ষা করছে।

“জন্মান্তর ধরে, চেয়ে বসে রই,"

“সেই অফুরন্ত দীর্ঘ সময়ের দেখায়।”

“বায়ু-ধূলি, আনে পরিমল তোমার,”

“রোজ দেখি তোমায় নতুন করে।”

প্রিয়তমা সীতামহালক্ষ্মী,

আমাদের সুন্দর গল্পের
এই শেষ কিছু পাতা।

এটা তোমার কাছে পৌঁছাতে
কিছুটা সময় লেগেছে হয়তো, সীতা।

আট মাস হয়ে গেছে।

তুমি রেগে আছো।

আমি বুঝতে পারি।

আমি কখনো তোমায়
রাগতে দেখিনি, সীতা।

আর ভবিষ্যতে দেখার
মতো সৌভাগ্যবানও নই।

তুমি নিশ্চয়ই আমার ভাবনায় রয়েছো...
আমি কেমন আছি, বেঁচে আছি কিনা?

আমি জানি।

সেজন্যই এই চিঠি লিখছি।

তুমি হয়তো আমার ব্যাপারে
অনেক কিছু শুনেছো, সীতা।

কিন্তু...

ওগুলো কিছুই সত্যি না।

সত্যি সেটাই যেটা তুমি বিশ্বাস করো।

আমি দেশদ্রোহী নই।

রাজকন্যা নূরজাহান
কাশ্মীরেই কোথাও আছেন।

খুঁজে বের করো ঠিক কোথায় আছেন?

ঐ চিঠি সীতার হাতে যেন না পড়ে।

আমি দায়িত্ব নিয়ে,
কাল ফেরত আসছি।

বেচারা বিষ্ণু স্যার।

ওনার উপায় ছিল না।

ওনার পরিস্থিতিই এমন।

স্যার, ওরা দুজনের কথা বলেছিল।

কেবল একজনই যাবে।

ওদের ঠিক করতে দাও,
কে যাবে?

লে. রাম!

আমি বুঝতে পারছি
তোমার উপর দিয়ে কী যাচ্ছে।

ভারত তোমায় এক
অনাথের মতো ছেড়ে দিয়েছে।

নিজের দেশের উপর
রাগ হয় নিশ্চয়ই, ঠিক?

আমি জন্ম থেকেই অনাথ।

কিন্তু আমি দেশমাতার
উপর কখনো রাগ করিনি।

বিষ্ণু, আমি জানি তুমি
দেশের জন্য মরতে প্রস্তুত।

কিন্তু তোমার পরিবারের চিন্তাও তো আছে?

তোমার বাবা-মা মাদ্রাজে থাকে, তাই না?

ওনাদের সাথে এ আকরাম। মুজাহিদিন।

ওহ!

অভিনন্দন!

গত সপ্তাহে তোমার এক ছেলে হয়েছে!

ওখানে যে লোকটা কফি খাচ্ছে...

মুস্তফা।

এইবার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল
শুধু কফি খেয়ে চলে আসতে।

কিন্তু তুমি যদি সহযোগিতা না করো,

নির্দেশনায় পরিবর্তন আনতে হবে।

কী চান আপনারা?

আমরা কাশ্মীরের সকল
আর্মি ইউনিটের কো-অর্ডিনেট চাই।

দিয়ে দাও আর চলে যাও।

শুধু আমাদের কো-অর্ডিনেটগুলো দিয়ে দাও
আর তুমি ঘরে ফিরে যেতে পারবে।

আমি কথা দিচ্ছি!

এই প্রশ্ন বিষ্ণু স্যারকে করো না।

উনি আমার মতো নন।

প্রাণ নিয়ে নেবেন।

স্যার, ও মেনে গেছে।

কো-অর্ডিনেট দিতে রাজি হয়ে গেছে।

না!

বিষ্ণু স্যার!

বিষ্ণু স্যার!

না, স্যার!

প্লিজ আমার কথা শুনুন, স্যার।

এমনটা করবেন না, স্যার।

কো-অর্ডিনেট দিয়েন না, স্যার।

সঠিক তথ্য, বিষ্ণু।

এই খবর বাইরে বেরুলে,

তুমি নিজ দেশে বিশ্বাসঘাতক
হয়ে বেঁচে থাকবে।

যদি আমাদের সহযোগিতা করো,
নিজের পরিবার নিয়ে সুখে থাকবে।

না, স্যার!
প্লিজ, স্যার!

- ও দেশদ্রোহী হয়ে যাবে।
- স্যার, প্লিজ।

আপনি জীবনভর অনুশোচনা করবেন।

বিষ্ণু স্যার!

না, স্যার!

না!

বিষ্ণু স্যার!

কো-অর্ডিনেট দিয়েন না, স্যার।

প্লিজ, রামকে কষ্ট দিয়ে মারবেন না।

বিষ্ণু স্যার, প্লিজ।

ওর সাথে সৈনিকের মতো ব্যবহার করবেন।

না, স্যার!

বিষ্ণু স্যার, প্লিজ।

আপনি জীবনভর অনুশোচনা করবেন।

কো-অর্ডিনেট দিয়েন না, স্যার।

আমি দেখতে পাচ্ছি... এই চিঠি
তোমার চোখের জলে ভিজে যাচ্ছে।

আমি দেখতে পাচ্ছি!

মুছে ফেলো!

আমি শুনতে পাচ্ছি...

তোমার কন্ঠ আমায় ডাকছে।

আমি শুনতে পাচ্ছি, তা আমার
চারপাশের নিস্তব্ধতা দূর করে দিচ্ছে।

চলো, চলো!
সময় শেষ হয়ে গেছে।

চলো, জলদি।

চলো!

রাম! আমার কিছু
করার থাকলে, বলো।

আপনার সাহায্য চাই, স্যার।

আপনি কি এই চিঠিটা সীতা
অবধি পৌঁছে দিতে পারবেন?

বিদায়!

প্লিজ আমায় ভুলে যেও।

কারন যখন তুমি এই চিঠি পড়বে,

আমি চলে যাব।

রাম!

সেই রানির প্রতি যে সবকিছু ছেড়ে এসেছিল,
এক ৬০০ রুপি বেতনের সৈনিকের জন্য।

এই জীবনের তরে বিদায়।

রাজকন্যা নূরজাহান।

“ফিরে আসবে না তুমি, এই জেনে,”

"প্রশ্নের বৃষ্টি গিয়েছে থেমে।”

“জন্মান্তর ধরে, চেয়ে বসে রই,"

“সেই অফুরন্ত দীর্ঘ সময়ের দেখায়।”

পরিণতিতে ব্রিগেডিয়ার বিষ্ণু শর্মা
নিজ পিস্তল দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন।

লে. রামের লেখা চিঠির ভিত্তিতে,
আর্মি অ্যাক্ট ৩৪ এ অনুসারে একটি তদন্ত শুরু হয়েছে।

সীতামহালক্ষ্মী।

এখানে আসার আগে,

কেউ আমায় তাদের কাছে
ক্ষমা চাইতে বলেছিল।

আমি রেগে গিয়েছিলাম।

কিন্তু এখন যদি তা না করি,
আমি হয়তো মরে যেতে পারি।

আমি দুঃখিত।

চিঠির জন্য ধন্যবাদ।

রাম বেঁচে আছে?

না!

আফরিন শুধু আনন্দ মেহতাকে স্যরিই বলেনি,
আরো ১৮ ভারতীয় যুদ্ধবন্দীকে পাকিস্তান থেকে মুক্ত করেছে।

অনুবাদ ও সম্পাদনায়ঃ
:.:.: তানভীর আহাম্মেদ লিওন :.:.: